আওয়ামী লীগের নাম উচ্চারণ না করে দলটির শাসনামলে নিপীড়ন-নির্যাতনের দিকে ইঙ্গিত করে কথা বলেন এই উপদেষ্টা।
Published : 26 Aug 2024, 06:20 PM
কোনো রাজনৈতিক দলের খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত না হতে হিন্দুদের প্রতি অনুরোধ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
তিনি বলেছেন, “আপনারা কারও রাজনৈতিক খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না। আপনারা স্বাধীন মানুষ, স্বাধীন জনগোষ্ঠী। সবার মতো আপনাদেরও সমান অধিকার আছে।
সোমবার বিকালে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার আগে ঢাকার পলাশী মোড়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন পরামর্শ দেন।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবছরের মতো এবার এই শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দি দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
অবতার হিসেবে তিনি প্রেম, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। ব্রতী হন অত্যাচারী ও দুর্জনের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় ভালো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায়।
দুষ্টের দমন করতে একইভাবে যুগে যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে আসেন, সত্য ও সুন্দর ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন- এটাই সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস।
হিন্দুদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের নাম উচ্চারণ না করে দলটির শাসনামলে নিপীড়ন-নির্যাতনের দিকে ইঙ্গিত করে কথা বলেন আসিফ নজরুল।
হিন্দুদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা বরং রাজনীতিবিদদের খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করবেন। তাদের কমিটমেন্ট নেবেন, মন্দিরের হামলার বিচার করবেন; আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে দলই আসুক।
“যারা (আওয়ামী লীগ) আপনাদের ভোট ব্যাংক হিসেবে ভাবে, তাদের ১৫ বছরের শাসনামলে আপনারা কি নিরাপদে ছিলেন? আপনাদের কতগুলো মন্দিরে আক্রমণ হয়েছে, অগ্নিসংযোগ হয়েছে? একটি ঘটনারও কি বিচার পেয়েছেন? ১৫ বছর কি বিচারের জন্য যথেষ্ঠ ছিল না?”
তিনি বলেন, “কোনো ধর্মই বলে না জনগণের সম্পদ লুট কর, গুম কর, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করো। কোনো ধর্ম বলে না জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নাও। কোনো ধর্ম বলে না দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করো।”
‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি’ ও ‘ধর্মব্যবসায়ীদের’ কারণে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি হয় বলে মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, “তাহলে কেন এত বিভেদ? এই বিভেদটা হয় মূলত কিছু ধর্মব্যবসায়ী এবং ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা মানুষের কারণে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বাংলাদেশের প্রত্যেক সরকারের আমলে কম-বেশি হয়েছে।”
এ সময় তিনি হিন্দুদের সংখ্যালঘু না ভাবার অনুরোধ করে বলেন, “আপনারা নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না। বাংলাদেশের মালিকানা আপনাদেরও রয়েছে। আমাদের সংবিধানেও কাউকে মাইনরিটি বলে নাই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, সবার সমান অধিকার রয়েছে। ”
জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রাপূর্ব আলোচনায় কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা হওয়া মো. নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন বাংলাদেশ একটি পরিবারের নাম। সেই একই কথা আমি প্রতিফলিত করতে চাচ্ছি, বাংলাদেশ একটি পরিবারের নাম, একটি দেহের নাম। আমার শরীরের একটি অংশ যদি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে গোটা শরীর আঘাত্রপ্রাপ্ত হয়।
“একইভাবে আমাদেশের দেশের যে কোনো জনগোষ্ঠী যদি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, যদি অনিরাপদ থাকে, তাহলে গোটা বাংলাদেশই কিন্তু অনিরাপদ থাকে। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সকল জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সবার নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। বাংলাদেশকে এক থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাইরের কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।”
নাহিদ বলেন, গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় খুবই ন্যক্কারজনকভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন হয়েছে, তাদের সম্পত্তি লুট করা হয়েছে। এগুলোর কোনো ধরনের বিচার কিন্তু করা হয়নি। বিচার করবে কীভাবে?
যারা বিচার করবে, তারাই এ ঘটনাগুলো সঙ্গে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করে নাহিদ বলেন, “রাজনৈতিক ইন্ধনে এ ধরনের ঘটনাগুলো হয়েছিল।”
বৈষম্যহীন, নতুন বাঙলাদেশের স্বপ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, “আজকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বারবার রাজনৈতিক টুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না। হামলা হলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, কিন্তু বিচার হয় না।
“আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপন্ দেখছি, যেখানে সবাই সুবিচার পাবে। একটা বাংলাদেশ চাই যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না ।”
আলোচনা শেষে পলাশীর মোড় থেকে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত যাওয়ার কথা রয়েছে।
আয়োজকরা সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার শোভাযাত্রা অনাড়ম্বরভাবে করা হয়েছে। জন্মাষ্টমীর উৎসবের টাকা বাঁচিয়ে তা বন্যার্তদের সহযোগিতায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা ও উপদেষ্টা সুব্রত চৌধুরী, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল ও উপদেষ্টা তপন মজুমদার বক্তব্য দেন।