“ঢাকা শহরে ছিনতাইয়ের প্রবণতা একটু বৃদ্ধি পাওয়ায়, এবং দুই একটি ঘটনা ভাইরাল হওয়ায় আমরা ছিনতাইকারী এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যপক অভিযান শুরু করেছি।”
Published : 26 Feb 2025, 10:03 AM
‘দুয়েকটি’ ঘটনা ঘিরে ঢাকাবাসীর মনে সৃষ্টি হওয়া ‘নিরাপত্তাহীনতা’ ঘোচাতে জোরদার করা পুলিশি কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে নিজেদের ‘আরো অ্যাকটিভ’ বলে দাবি করেছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
তিনি বলেছেন, “ঢাকা শহরে ছিনতাইয়ের প্রবণতা একটু বৃদ্ধি পাওয়ায়, এবং দুই একটি ঘটনা ভাইরাল হওয়ায় আমরা ছিনতাইকারী এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যপক অভিযান শুরু করেছি।”
ঢাকার পুলিশ প্রধানের ভাষ্য, “একটা ঘটনা যখন হয়, সমাজে একটা প্যানিক সৃষ্টি হয়, যা নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করতেছে। এটা থেকে মানুষকে বের করে আনার জন্য আমরা আরো বেশি অ্যাকটিভ।”
মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকার বিজয়সরণি এলাকার তল্লাশিচৌকি পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাজ্জাত আলী।
তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে ছিনতাইকারীদের ধরা এবং তাদেরকে দমন করার জন্য আমাদের ডিএমপির সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র্যাব, এপিবিএন, এটিইউ সকল এজেন্সি যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। এর আগে আমরা যৌথভাবে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করি। আজকে যে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, সকল এজেন্সি মিলিয়ে এটার প্রধান উদ্দেশ্য ছিনতাইকারীদের দমন করা।”
ছিনতাইকারীদের ধরতে ঢাকার মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় মঙ্গলবার যৌথবাহিনীর ‘ব্লকরেইড’ দিয়েছে বলে জানান ডিএমপিস কমিশনার।
তিনি বলেন, “চিহ্নিত অপরাধীদের তালিকা করে সেই মোতাবেক আমাদের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই যে আমরা যে কোনো মানুষকে অ্যারেস্ট করে কোর্টে সোপর্দ করি। আমাদের চিহ্নিত ছিনতাইকারী যারা আছে, তাদেরকেই শুধু অ্যারেস্ট করব।”
মঙ্গলবার রাতে সেনা সদস্যদের সহায়তায় ঢাকায় ৬৫টি চেকপোস্ট পরিচালনার তথ্য দিয়ে সাজ্জাত আলী বলেন, “ঢাকায় ‘ক্রাইম এগেইনস্ট প্রপার্টি’ বলতে সবচেয়ে সহজ ছিনতাই করা। এত অলি-গলির মধ্যে ছিনতাইকারী এক-দুইজন মিলে চাপাতিটা ধরে ছিনতাই করে দিল।
“ডাকাতির শঙ্কা নাই, অন্য অপরাধেরও শঙ্কা নাই। তবে পরিস্থিতি দুই তিন দিন ধরে একটু খারাপ। তার আগে প্রায় মাসখানেক ছিনতাইয়ের ঘটনা খুবই কম ছিল।”
বর্তমানে কোথাও কিছু ঘটলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “এখানে একটি ঘটনা ঘটলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যায়। অপরাধ যে কখনো ছিল না, তা তো না। কিন্তু তখন যেহেতু মিডিয়া এত অ্যাডভান্স ছিল না, সেজন্য প্রচারটা হত না।
“এখন একটা ঘটনা ঘটার সাথে সাথে একজন ভিডিও করে। ইভেন আগে যে একটা ঘটনা ঘটলে একজন সামনে আগায়ে এসে প্রতিরোধের চেষ্টা করত, এখন সেটা না করে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ভিডিওতে ব্যস্ত। ওই লোকটা যে বিপদে পড়ছে, আগায়ে না গিয়ে ভিডিও করে।”
সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এত জনবহুল একটা শহর, এখানে সবাইকেই অবদান রাখতে হবে। ঢাকাবাসীর সবার কাছে অনুরোধ, সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে আমরা চেষ্টা করি, এ থেকে বের হয়ে আসব।
“এত ঘনবসতির একটা চাঁনমিয়া হাউজিং, অথবা ঢাকা উদ্যানই ধরেন। কী পরিমাণ গলি ঢাকা উদ্যানে আছে। এত এত ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির লোক কি সরকারের আছে? সেটাতো নাই। প্রত্যেক গলিতে লোক দিতে পারব না।”
তিনি বলেন, “আমরা মনিটরিং সিস্টেম বের করছি, আরো টেকনোলজি বের করতেছি। ইনশাল্লা সব জায়গা কাভার করব। আমরা চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের যদি আটকাতে পারি, তাহলে দেখবেন ঘটনা কমে গেছে।”
তবে সহায়তার মানে ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া নয়’ মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আমি কোনোভাবেই ঢাকাবাসীকে আইন হাতে তুলে নিতে বলছি না। আমরা সম্মিলিতভাবে একটা প্রতিরোধ সৃষ্টি করি। আমরা যে বিভিন্ন ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি আছি। কাউকে পেলে আপনারা আমাদের হাতে তুলে দেন, আমরা আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেব। নিজেরা কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেয়।”