জ্বালানি নিয়ে কঠিন সময় পার করছি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

“শিল্প পুলিশ কাজ করছে বলেই আজ শিল্পখাতে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে,” বলেন মন্ত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2022, 04:00 PM
Updated : 10 Nov 2022, 04:00 PM

বিশ্বজুড়ে জ্বালানি খাতের কঠিন বাস্তবতায় অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো আছে বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

তিনি বলেছেন, “আমরা কঠিন সময় পার করছি। জ্বালানি মূল্য কয়েকগুণ বেড়েছে, এটা সারা পৃথিবীর বাস্তবতা। শিল্পখাতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গ্যাস আমদানি করতে হয়। পৃথিবীর বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখনও ভালো অবস্থানে আছে। যদিও অনেক সময় অনেক কারখানায় গ্যাস সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না।"

বৃহস্পতিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে শিল্পাঞ্চল পুলিশের যুগপূর্তির অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “একটা সময় ইন্ডাস্ট্রির পর ইন্ডাস্ট্রি আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার দৃশ্য আমরা দেখেছি। মালিকদের কেউ কেউ যখন শ্রমিকদের বেতন দিতে পারতেন না; তখন বিক্ষোভ, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও হতো। সে অবস্থা এখন বদলেছে।”

১৫ বছর আগের পুলিশ ও বর্তমান পুলিশ একদম আলাদা মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের গার্মেন্টেস কারখানার মা-বোনেরা রাতে বের হলে তার বেতনের টাকা ছিনতাই হতো। এখন শিল্প পুলিশ সেখানে সেতুবন্ধনের কাজ করছে। শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, দেনাপাওনা নিশ্চিত করছেন। পুলিশ শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া ও অধিকার আদায়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।

“শিল্প পুলিশকে বলব, সবার সমস্যা শুনুন। শ্রমিকদের, মালিকদেরও। বেসরকারি শিল্পখাতে অগ্রগতি উন্নতি ঘটছে। শিল্প পুলিশ কাজ করছে বলেই আজ শিল্পখাতে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে।”

ঢাকায় আর কারখানা বাড়ানোর ইচ্ছা সরকারের নেই জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, “ঢাকায় আর লোকসংখ্যা বাড়ানো যাবে না। আমরা ঢাকায় শিল্পকারখানা গড়াকে নিরুৎসাহিত করছি।

“বরং ঢাকা থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে আমি স্মরণ রাখব- ঢাকায় ডিএমপির কয়েকজন কর্মকর্তা রেখে শিল্পকারখানার শৃঙ্খলায় নজরদারি রাখা যায় কি না।”

পুলিশের মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল-মামুন অনুষ্ঠানে বলেন, “শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে শিল্প পুলিশ। গত এক যুগে বৈশ্বিক পরিস্থিতি সামলে এগিয়ে গেছে শিল্প খাত।”

শিল্প খাতের উন্নতি ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, “শিল্পখাতে শ্রমিক অসন্তোষ, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা এ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, শৃঙ্খলা রক্ষায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করছে শিল্প পুলিশ।”

পোশাক খাতে 'দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র' প্রতিহত করতে তৎপরতার কথা বলতে গিয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, “আগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস খাতে অসন্তোষ ছিল। অরাজক পরিস্থিতি ছিল। ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠন করা হয়। তারপর থেকে শিল্পাঞ্চল এবং গার্মেন্টস খাতে নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রতিটি সদস্য।

“গার্মেন্টস খাত নিয়ে গুজব কিংবা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বিরুদ্ধে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে যেন কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়েও কাজ করে যাচ্ছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ।"

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “আমরা মহামারী থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। তবে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

“আমাদের রপ্তানি ধরে রাখতে হবে। সরকার যেভাবে কাজ করছে তাতে আমরা আশান্বিত। যুদ্ধ গ্লোবাল সমস্যা, এটার প্রভাব সবদেশেই পড়েছে। বিশ্বের টপ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৮টিই বাংলাদেশের।”

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, “শিল্পখাতের নিরাপত্তার জন্যই শিল্প পুলিশ। শ্রমিকের চেয়ে বেশি কাজ করছে তারা।

“কখন কোথায়, কী ঘটতে পারে- সেটা বিবেচনায় নিয়ে প্রোঅ্যাকটিভলি কাজ করছে তারা। তাই হয়তো শ্রমিকরাও এখন শিল্প পুলিশের প্রশংসা করেন।"

মালিক হিসেবে নিজের সঙ্গে শ্রমিকদের সম্পর্ক খুব ভাল দাবি করে এ উদ্যোক্তা বলেন, “আসলে শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে দরকার দক্ষ ম্যানেজমেন্ট। যেখানে মালিকপক্ষ দক্ষ ম্যানেজমেন্ট রেখেছে, সেখানে শ্রমিক অসন্তোষ নেই। শ্রমিক অসন্তোষের কারণই সঠিক সময়ে অসন্তোষ হ্যান্ডেল করতে না পারা।

“মালিকরা যতোই বলুন, উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছি, শিল্প এগিয়েছে- কিন্তু এসবই সম্ভব হয়েছে শ্রমিকদের কারণে। তারা আছেন বলেই সম্ভব। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে শিল্প পুলিশ।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।