ঐতিহ্যের ঢাকা গেইটের সংস্কার শুরু

এশিয়াটিক সোসাইটির ঢাকা কোষের তথ্য অনুয়ায়ী, ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঢাকা গেইট নির্মাণ করেন মীর জুমলা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 11:06 AM
Updated : 24 May 2023, 11:06 AM

অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংসের প্রহর গুনতে থাকা সাড়ে তিনশ বছরের পুরনো ঢাকা গেইটকে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে আনতে শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নেতার মাজার সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী এই ফটকের সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন। 

তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন পরে হলেও এই প্রথম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঐতিহ্যের একটি স্থাপনার সংস্কার শুরু করেছে। এছাড়া আমরা লালকুঠিতেও সংস্কার শুরু করেছি।

“ধাপে ধাপে, পর্যায়ক্রমে আমাদের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে সংস্কার, সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করব। যাতে করে বহির্বিশ্বের পর্যটকরা এসে ঢাকাকে বুঝতে পারে, জানতে পারে এবং শিখতে পারে।"

এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ঢাকা কোষের তথ্য অনুয়ায়ী, ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঢাকা গেইট নির্মাণ করেন মীর জুমলা।

মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মীর জুমলা ছিলেন বাংলার সুবাদার (মোগল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক)।

বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশে ব্যবহার হতো এ তোরণ। সে সময় এর নাম ছিল ‘মীর জুমলার গেইট’। পরে কখনও ‘ময়মনসিংহ গেইট’, কখনও ‘ঢাকা গেইট’ এবং অনেক পরে নাম হয় ‘রমনা গেইট’। রমনায় প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হতো বলে সাধারণ মানুষের কাছে ফটকটি এ নাম পায়।

এ ফটকের পশ্চিম অংশটি পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ভবনের পাশে। এখন সেখানে মাথার ওপর মেট্রো রেল হওয়ায় গেট অনেকটাই আড়ালে পড়ে গেছে। উত্তরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিন নেতার সমাধির প্রবেশ পথের অংশ। দক্ষিণে পড়েছে দোয়েল চত্বর।

জরাজীর্ণ এই স্থাপনাটি মানুষের মন থেকেও হারিয়ে যেতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঢাকা গেইট সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। সে সময় বলা হয়, সংস্কার করে এ স্থাপনাকে সপ্তদশ শতকের সেই রূপে ফিরিয়ে আনা হবে। 

বুধবার সেই কাজের উদ্বোধন করে মেয়র তাপস বলেন, "নির্বাচনের সময় আমি বলেছিলাম- ঢাকার যে ঐতিহ্য আছে এই ঐতিহ্যকে আমাদের ধারণ করতে হবে, সংরক্ষণ করতে হবে। শুধু দেশবাসী নয় বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। এরই একটি শুভ সূচনা আজকে আমরা করতে পারছি।

“এই ঐতিহাসিক ঢাকা ফটক- যেটা রমনা ফটক নামেও পরিচিত ছিল একসময়… তৎকালীন বাংলার সুবেদার মীর জুমলা এটি নির্মাণ করেছিলেন। সেই সময়ের চিত্র যদি আপনারা দেখেন, এই ফটকই ছিল ঢাকার মূল প্রবেশদ্বার। বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে আসার পরেই এই প্রবেশদ্বার দিয়েই সবাই ঢাকায় প্রবেশ করত এবং এই ফটকের চারপাশে পাহারারত অবস্থায় হাতি রাখা হত। এরকম চিত্রও আমরা দেখেছি। আমরা সেই ইতিহাসকে, সেই ঐতিহাসিক চিত্রকে ফিরিয়ে আনতে চাই।"

অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, “এই ঢাকা কেবলমাত্র রাজধানী হিসেবেই নয়, এর একটা ঐতিহ্য রয়েছে। ৪০০ বছরের ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাসের সাথে অনেক কিছু জড়িত।

“ছাত্রজীবনে আমরা এই রমনা গেইট দিয়ে ঢুকতাম। বাষট্টির সেই সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় এখানে মিলিটারি এসে রেইড দিয়েছিল, যাতে করে আমরা অগ্রসর হতে না পারি। এখানেই মিলিটারিদের সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ হয়েছিল। এছাড়াও এখানে ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজার রয়েছে। এখানে যে মসজিদটি রয়েছে- যেটাকে গরম মসজিদ বলে সবাই আমরা জানি।"

এ উদ্যোগে ঢাকার ঐতিহ্য ফিরবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, "ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন ঢাকা নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। আমি আশা করব যে, তার সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে এই ঢাকার পুরনো ঐতিহ্যগুলো আমরা ফিরিয়ে নিয়ে আসব।”

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, "আমরা গত ৫০ বছর ধরে চেষ্টা করছি ঢাকার ঐতিহ্য রক্ষা করতে। আজকে খুবই আনন্দের দিন এজন্য যে, আমাদের বর্তমান মেয়রই একমাত্র মেয়র যিনি ঢাকার ঐতিহাসিক কীর্তিগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছেন।"

নিজের জন্মদিনে ঢাকা ফটকের সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, "আপনারা দেখেছেন- দুই সপ্তাহ আগে আমরা ঢাকেশ্বরী থেকে লালবাগ এলাকায় সরেজমিনে গিয়েছি। নর্থব্রুক হলের কাজ শুরু হয়েছে।

“আজকে ঐতিহাসিক ঢাকা গেইট তথা রমনা গেইটের সংস্কার কাজ শুরু হল। আমার আজকে বেশি আনন্দ লাগছে এই কারণে যে, আজকের এই শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে ৫০ বছর পর (ঐতিহ্য রক্ষার) এই আন্দোলন সফল হতে যাচ্ছে।”