বিচারক আদেশে বলেন, আব্দুল্লাহিল কাফীকে ১২ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১৭ নভেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে পুলিশ।
Published : 12 Sep 2024, 01:11 PM
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফীকে এবার সাভারের শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. জুলহাস উদ্দীন তার আদেশে বলেছেন, আব্দুল্লাহ হিল কাফীকে ১২ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১৭ নভেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে পুলিশ। রিমান্ড শেষ হলে তাকে ১৭ তারিখ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী তিন ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে।
দশ বছর বয়সী ছেলে আলিফসহ ইঞ্জিনিয়ার আরিফ মাইনুদ্দিন অপহরণ, নির্যাতন এবং মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় ৮ দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার পুলিশ কর্মকর্তা কাফীকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর সাভারের ইয়ামিন হত্যা মামলায় তাকে ফের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আব্দুল্লাহ বিশ্বাস।
রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষকে সহযোগিতা করার জন্য অংশ নেন আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী ও শামসুজ্জামান দিপু।
শুনানিতে আইনজীবী ফারুকী বলেন, “ফেইসবুক, ইউটিউবে দেশবাসী সাভারের ওই হত্যাকাণ্ড দেখেছে। ইয়ামিন তখনো জীবীত ছিল। কিন্তু পুলিশ তাকে চিকিৎসা না করিয়ে বরং রাস্তায় ফেলে চলে যায়। এমন নৃশংস মানুষ কীভাবে হতে পারে? তাদেরওতো বাড়ীতে ছোট ছোট বাচ্চা আছে! তাদের মনে কি একটুও দয়ার উদ্রেক হয়নি?”
কাফীর পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি।
তিনি বলেন, “সিআরপিসি ১৩২ ধারা অনুযায়ী বেআইনি সবাবেশ করলে সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া কোনো মামলা গ্রহণ করা যায় না। এছাড়া আরো বিভিন্ন আইনগত প্রশ্নে এই মামলা বারিত।”
এ সময় প্রতিবাদ করেন আইনজীবী দিপু। তিনি বলেন, “আপনি কোন দেশ থেকে এসেছেন? আপনি কি আন্দোলনের সময় বাংলাদেশে ছিলেন না? আপনি কি ইয়ামিন হত্যাকাণ্ডের ভিডিও একবারও দেখেননি।”
বিচারক উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আব্দুল্লাহ হিল কাফীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকার সাভারে গুলিতে নিহত হন শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন। তিনি মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তার মামা আব্দুল্লাহ আল কাবির গত ২৫ অগাস্ট ঢাকার হাকিম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সাভার থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৮ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা সাভার বাজার বাস স্ট্যান্ডে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে। তারা ইয়ামিনকে ধরে পুলিশের সাঁজোয়া যানের কাছে টেনে নিয়ে যায়। পরে তা বুকের বাঁ পাশে গুলি করা হয়।
এরপর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ইয়ামিনকে টেনে সাঁজোয়া যানের ওপরে ফেলে রেখে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ভয় দেখানোর জন্য গাড়ি নিয়ে টহল দেয়।
পরে ইয়ামিনকে প্রায় মৃত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয় এবং সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্যকে বের করে তার পায়ে আবারও গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই পুলিশ সদস্য ইয়ামিনকে মৃত ভেবে পায়ে গুলি না করে রাস্তার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেয়।
পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইয়ামিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহিল কাফী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুর রহমানসহ ৪৯ জনকে আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।
কাফীকে গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর গত ৯ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।