আয় বাড়াতে বহরে বৈদ্যুতিক ও সিএনজি চালিত বাসও যোগ করতে চায় সরকারি পরিবহন সংস্থাটি।
Published : 11 Jul 2024, 08:45 PM
আয় বাড়াতে আন্তর্জাতিক রুট বৃদ্ধির পাশাপাশি বহরে বৈদ্যুতিক এবং সিএনজিচালিত বাস যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে সরকারি পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন-বিআরটিসি।
বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এসব পরিকল্পনার কথা উল্লেখ আছে।
বিআরটিসি যেসব আন্তর্জাতিক রুটের কথা ভাবছে সেগুলো হল বরিশাল-কলকাতা, চট্টগ্রাম-কলকাতা, ঢাকা-গ্যাংটক (সিকিম)-দার্জিলিং ও ঢাকা-নেপাল।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তাদের এসব উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বলেছি। তাদের জনবল সংকটের সমাধানেও দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”
সংসদীয় কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই বৈঠকে বিআরটিসির চালক নিয়োগের সময় মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা, লাইসেন্স ব্যবস্থার তদারকি বৃদ্ধি এবং গাড়ির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচাখালি থেকে মিঠামইন উপজেলা পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন উড়াল সড়ক ও কিশোরগঞ্জ হতে ঢাকার সংযোগ রাস্তাসমূহ দ্রুততার সঙ্গে সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
বৈঠকে হাওরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে চলাচলের জন্য ব্যবহৃত ফেরির ভাড়া সাশ্রয়ী করে মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, আগে লোকসানি থাকলেও গত তিন অর্থবছরে বিআরটিসি লাভে আছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মুনাফা ছিল ৪৭ কোটি ৭১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।
দেড় দশকে বহরে যুক্ত দেড় হাজার বাস
বৈঠকে জানানো হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিআরটিসির বহরে যুক্ত হয় এক হাজার ৫৫৮টি বাস। বাসগুলো যে দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে সেসব দেশের দেওয়া ঋণের অর্থ ব্যবহার হয়েছে।
বাসগুলো কেনা হয়েছে ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে, খরচ হয়েছে এক হাজার ২৯৮ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
এর মধ্যে নরডিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের ১১৩ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ সহায়তায় চীনের ডংফেং ইয়াংসি থেকে ২৭৫টি একতলা সিএনজিচালিত বাস; ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ফান্ডের ২৭৮ কোটি ২৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা ঋণ সহায়তায় দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়্যু থেকে ২৫৫টি সিএনজিচালিত এসি ও নন এসি বাস; ইন্ডিয়ান ডলার ক্রেডিট লাইনের ৩৭৯ কোটি ৩৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা ঋণের আওতায় অশোক লিল্যান্ড থেকে ২৯০টি দ্বিতল, ৮৮ একতলা এবং ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস এবং ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি-২) ৫২৭ কোটি ১২ লাখ ৪ হাজার টাকা ঋণে ৩০০টি দ্বিতল, ১০০ এসি-ননএসি এবং ১০০ এসি ইন্টারসিটি বাস কেনা হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে বিআরটিসির বহরে বর্তমানে এক হাজার ৩৫০টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ২৪৪টি বাস ২০৩টি রুটে চলছে। ১০৬টি বাস মেরামতে রয়েছে।
লোকবল সংকট
সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে বিআরটিসির লোকবল সংকটের বিষয়টিও সামনে এসেছে। সংস্থাটির অনুমোদিত পদ ছয় হাজার ৫১৭টি, তবে স্বেচ্ছা অবসর বা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে ৬২৪টি বিলুপ্ত করার পর এখন পদ সংখ্যা ৫ হাজার ৮৯৩টি।
বর্তমানে কর্মরত আছেন তিন হাজার ৯২০ জন। শূন্য পদের সংখ্যা এক হাজার ৯৭৩টি।
প্রথম শ্রেণির ১২৪টি পদের মধ্যে কর্মরত ৮১ জন, শূন্য পদ ৪৩টি; দ্বিতীয় শ্রেণির ৬৪টি পদের মধ্যে কর্মরত ৪৪ জন, শূন্য ২০টি; তৃতীয় শ্রেণির ৫ হাজার ১৫৯টি পদের মধ্যে কর্মরত তিন হাজার ৬৩৭ জন, শূন্য পদ এক হাজার ৫২২টি; চতুর্থ শ্রেণির ৫৪৬টি পদের মধ্যে কর্মরত ১৮ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ৩৮৮টি।
কমিটির সভাপতি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে বৈঠকে মো. আবু জাহির, সেখ সালাহউদ্দিন, মো. মুজিবুল হক, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল্লাহ-আল-কায়সার, মোহাম্মদ গোলাম ফারুক ও নাছিমা জামান ববি বৈঠকে অংশ নেন।