এর আগে বিভিন্ন মামলায় ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে।
Published : 01 Sep 2024, 01:10 PM
বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হতাহতের ঘটনার দুই মামলায় সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
এর মধ্যে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজর ছাত্র ওমর ফারুক হত্যায় সূত্রাপুর থানার মামলায় তিন দিন এবং বাড্ডার ফুজি টাওয়ারের সামনে সুমন সিকদার হত্যা মামলায় তিন দিন হেফাতে নিয়ে পলককে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমদি দিয়েছে আদালত।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মইনুল ইসলাম রোববার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একই দিন লালবাগ থানায় বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় রিমান্ড শেষে আদালতে তোলা হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানবীর হাসান সৈকত ও সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেনকে হাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
হাকিম মো. মইনুল ইসলামের অফিস সহায়ক মো. তৌফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, আদালত শুরুর নির্ধারিত সময়ের প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৭টার দিকে এই শুনানি শুরু হয়। ১৫ মিনিট শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে ভোর ৬টার দিতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পলককে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।
আদালতকে রিমান্ড আবেদন পড়ে শোনান আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান। পলকের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী মো. সাদ্দাম হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জুনাইদ আহমেদ পলক এর আগেও বিভিন্ন মামলায় ১৭ দিন রিমান্ডে ছিলেন। আমি আদলতকে বলেছি, ওই সব মামলায় রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি। তাকে বার বার রিমান্ডে নিয়ে হয়ারানি করা হচ্ছে।
“এগুলো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা। মামলার ঘটনার সঙ্গে আমার মক্কেলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি আমার মক্কেলের রিমান্ড বাতিল পূর্বক জামিন আবেদন করছি।”
তিনি বলেন, “পলককে সকাল ৬টায় আদালতে আনা হয়। আমি ৬টার আগেই আদালত প্রাঙ্গণে এসেছি। যেদিন মামলা থাকে সেদিন আমি ভোর থেকে রাত পর্যন্ত আদালতেই থাকি, কারণ কখন কাকে আদালতে আনা হবে এটি এখন অনিশ্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে পলকের রিমান্ড ব্যাক করার কথা, এজন্য আমি সকাল ৬টার আগেই চলে এসেছি।”
পলককে সূত্রাপুর থানার মামলায় ২৬ অগাস্ট গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রাপুর থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক মো. আবুল কালাম আজাদ।
পরদিন ২৭ অগাস্ট অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তফাজ্জল হোসেন আবেদনটি দেখে রিমান্ড ফেরতের দিন শুনানির জন্য রেখে দেন।
রোববার সকালে আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যায় লালবাগ থানার মামলায় রিমান্ড ফেরত আসলে আবেদনটি শুনানি শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম মো. মইনুল ইসলাম।
মামলার বিবরণে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীরা সূত্রাপুর থানাধীন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারী কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। ওই সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ ও তাহাদের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গুলিতে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজর ছাত্র ওমর ফারুক মারা যান।
পলককে এই মামলা হামলার ‘মদদদাতা ও পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, সুমন সিকদার হত্যায় বাড্ডা থানার মামলায় রোববার পলককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক মো. রেজাউল করিম।
এ মামলার আজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন সুমন সিকদার। তিনি দুপুর ১২ টার সময় বাড্ডা থানাধীন উত্তর বাড্ডা ফুঁজি টাওয়ারেরর উত্তর পাশে প্রগতস্বরণীর রাস্তার উপর আসামাত্র আসামীরা তাদের নিকট থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আলোপাতাড়ি গুলি করে মো. সুমন সিকদারকে হত্যা করে।
সুমন সিকদার হত্যার ঘটনায় সুমনের মা মোসা. মাছুমা গত ২০ অগাস্টে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় জুনায়েদ আহমেদ পলকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।