তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রশ্নে রায় বদলানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল আবেদনে।
Published : 18 Aug 2024, 02:41 PM
প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন খারিজ হয়েছে।
রোববার আইনজীবী ইমরুল হাসানের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে তা খারিজ করে দেন ঢাকা মহানগর হাকিম দিলরুবা আফরোজ বিথি।
এ আদালতের পেশকার আশুতোষ ভৌমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঢাকার অন্য মহানগর হাকিমের এখতিয়ারাধীন হওয়ায় জবানবন্দি নিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৩ ধারায় মামলার আবেদন খারিজ করেছেন বিচারক।
দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ১৯৯৬ সালে এলেও ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের অধীনে হয় সাধারণ নির্বাচন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে অনীহা সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধান সংশোধন করে বিএনপি।
২০০৬ সালে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজনের রিট আবেদনে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় রিট আবেদনকারী পক্ষ। ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে এর শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস হিসেবে শীর্ষস্থানীয় ৮ জন আইনজীবী বক্তব্য দিয়েছিলেন।
তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন।
আপিল বিভাগের ৭ জন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতামতের ভিত্তিতে রায়ের জন্য দিন ঠিক হলে ৬ বিচারপতির তিনজনই অ্যামিকাস কিউরিদের পক্ষে একমত হন। অপর তিন বিচারপতি ভিন্ন মত তুলে ধরেন।
এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হকের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন।
আবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের ঘোষিত রায়ে দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনসহ জনমনে অসন্তুষ্টি দেখা দেওয়ায় তিনি রায়ে স্বাক্ষর না করে নথি নিজ জিম্মায় বাসায় নিয়ে যান।
২০১২ সালের ১৭ মে খায়রুল অবসর গ্রহণ করেন। রায় দেওয়ার ১৬ মাস ৩ দিন পর পরে ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল দাবি করে আবেদনে বলা হয়, “কিন্তু প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গিয়ে রায় ঘোষণার ১৬ মাস ৩ দিন পর যে রায় প্রকাশ করলেন, সেখানে তিনি এ অংশটি রাখেননি।”
মামলার আবেদনে বলা হয়, “অসাধুভাবে প্রধান বিচারপতির পদ ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাসভঙ্গ ও জালিয়াতির মাধ্যমে এ রায় প্রদান করেন।”
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলে এ বি এম খায়রুল হকের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়।