“যারা মামলা বাণিজ্য করছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে," বলেন তিনি।
Published : 19 Nov 2024, 08:00 PM
জুলাই-অগাস্টে চলা গণআন্দোলন দমনে যেসব মামলা হয়েছিল, তার প্রায় সবই প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এদির আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা।
গণ আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তিন দিন পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে আইন উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়া অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত ১৪ অগাস্ট জানিয়েছিলেন, কোটা সংস্কার ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ১ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সারাদেশে দায়ের করা সব ‘হয়রানিমূলক’ মামলা ৩১ অগাস্টের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে গিয়ে মঙ্গলবার আসিফ নজরুল জানান, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হলে সেই আইনের অধীনে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এই আইন প্রত্যাহারে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করেছি। তবে হ্যাকিং বা কম্পিউটার অপরাধ সংক্রান্ত মামলাগুলো চলমান থাকবে।"
আইন উপদেষ্টা বলেন, এই কদিনে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ৫ জন বিচারপতি, হাই কোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি এবং অধস্তন আদালতে ১০৯ জন বিচারক নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
“এছাড়া বাংলাদেশের ৬১টি জেলায় ৪ হাজার ৩০০ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দ্রুততম সময়ে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।”
আসিফ নজরুল বলেন, “এতো বেশি সংখ্যক নিয়োগ বাংলাদেশে এর আগে ঘটেনি। এর মাধ্যমে সব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।
“এখন যে ঢালাও মামলা হচ্ছে, মামলা বাণিজ্য করা হচ্ছে; তাও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।"
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যারা মামলা বাণিজ্য করছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিস্ফোরক মামলা পরিচালনার জন্য ২০ জন স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আসিফ নজরুল।
“এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন সহায়তা করেছে আইন মন্ত্রণালয়। চিফ প্রসিকিউটরসহ ১১ জন প্রসিকিউটর নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।"
তাছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৩৯ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি, নতুন আইনের মাধ্যমেই পরবর্তী বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে।"
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন অধ্যাদেশ হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, “একটা-দুটো দিন অপেক্ষা করেন। আর সংশোধনীটা তো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের প্রস্তাবনায় যেটা আছে সেখানে আদালতকে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
“তবে আদালত যদি মনে করেন, তাহলে তারা এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কনসার্ন অথরিটির কাছে সুপারিশ করতে পারেন।"
প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু চেষ্টার ঘাটতি নেই।
“সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন গঠনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং উক্ত সংস্কার কমিশনগুলোকে সকল প্রকারের সাচিবিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। সরকার ভালো একটা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে অনেক উপদেষ্টা আগের পেশায় ফিরে যেতে চায়।"
আইন উপদেষ্টা বলেন, “দেশে কোনো আসামিকে না পেলে রেড এলার্ট জারির আবেদন করতেই পারি। বাংলাদেশ ইন্টাপোলের সদস্য।
“শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের ফেলে রেখে নিজে পালিয়েছেন। নিজে পালানোর তিনদিন আগে তার স্বজনদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। নেতাকর্মীদের তাকে প্রশ্ন করা উচিত, তাদের ফেলে রেখে কেন পালিয়েছেন তিনি ?"
আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “সরকার আওয়ামী লীগের মতো দমন-পীড়ন চায় না। অযৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে নানা দুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
“সরকার বিষয়গুলো দেখছে। কঠোর হলে সরকার ভালোভাবেই কঠোর হবে।"