দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
Published : 16 Oct 2024, 04:40 PM
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তিন সংসদ সদস্য এবং তাদের স্ত্রী-সন্তানদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
তারা হলেন যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার, তার স্ত্রী ফারহানা জাহান মালা, দুই মেয়ে সামিয়া জাহান অন্তরা, মাঈসা জাহান অহনা এবং ছেলে জাবীর চাকলাদার।
বরগুনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান, তার স্ত্রী রওনক রহমান; গাইবান্ধা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, তার স্ত্রী রুহুল আরা রহিম।
দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত, যশোর-৬ আসনের সাবেক এমপি শাহীন এবং তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন।
আদালতে দুদকের পরিদর্শক আমির হোসেন বলেছেন, দুদকের উপ পরিচালক মো. শফিউল্লাহ তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
এদিন দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে শুনানি করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, “শাহিন চাকলাদারের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে শত শত কোটি টাকা জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
“অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন।
দুদকের আবেদনে ওপর শুনানি নিয়ে স্ত্রীসহ বরগুনা-২ আসনের সাবেক এমপি শওকত হাচানুর রহমান এবং গাইবান্ধা-৪ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালামের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন দেন একই বিচারক।
দুদকের পরিদর্শক আমির হোসেন বলেছেন, এদিন দুদকের উপ পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান পৃথক দুইটি আবেদনে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
হাচানুর রহমানের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়েছে, “বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি দখল, ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
“তদন্তে জানা গেছে, শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে (বরিশালের আগুরপুর রোড, রুপাতলী, জাগুয়া, দক্ষিণ আলেকান্দায়। বরগুনার কাঠালতলী, মাদারতলী, রায়হানপুর, গহরপুর, চরলাঠিমারা; ঢাকার নলটোনা, নতুন শহর এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকায়) এবং দেশের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে।
আরো বলা হয়েছে, “অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও তার স্ত্রী মিসেস রওনক রহমান দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেঝে।তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাদের বিদেশ গমণ নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।“
আবুল কালাম আজাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়, গাইবান্ধা-৪ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাত করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিম্নস্বক্ষরকারীর নিকট অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
“আবুল কালাম আজাদ গোবিন্দগঞ্জে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকার জমি, ৬ তলা বাড়ীসহ ৬টি ফ্ল্যাট, বগুড়া শহরের জলেশ্বরী তলায় ২টি বাড়ি, ঢাকার মোহাম্মদপুরে ১ টি বাড়ী, গাজিপুরে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ ২০টির মত বাস ও ট্রাক ক্রয় করেছেন।
“আবুল কালাম আজাদ এবং তার স্ত্রী মোছা. রুহুল আরা রহিম অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
এদিন দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর রেজাউল করিম শুনানি করেন।