তাদের সবাইকে অন্য মামলায় এক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
Published : 28 Jul 2024, 07:41 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার কাজীপাড়ায় মেট্রোরেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগের মামলায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ আটজনকে জিজ্ঞসাবাদের জন্য ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
ঢাকার মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম রোববার পুলিশের করা রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
রিজভী, পরওয়ার, নুর ছাড়া বাকি পাঁচজন হলেন– বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ সালাম ও বিএনপির সমর্থক মাহমুদুস সালেহীন।
তাদের মধ্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর সেতু ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় এবং রিজভী পল্টন মডেল থানার মামলায় রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন। বাকি ছয়জন বিটিভি ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান মুন্সী গত শুক্রবার আসামিদের দশ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। রোববার সে বিষয়ে শুনানি হয়। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের এমআরটি লাইন-৬ এর উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. ইমাম উদ্দীন কবীর গত ২২ জুলাই কাফরুল থানায় এ মামলা করেন। সেখানে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় গ্রেপ্তার ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আল আসাদ ওরফে সাঈদ খানসহ ছয়জন পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। শুক্রবার ঢাকার মহানগর হাকিম আরোবিয়া খানম শুনানি শেষে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনরত দল ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে’ ৫/৬ হাজার দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা, লোহার রড, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র যেমন- রামদা, দা, কুড়াল, শাবল, কাটার, হাতুড়ি ইত্যাদি নিয়ে কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায় এবং মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম লুটপাট করে নিয়ে যায়।
তাদের অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুরে মেট্রোরেল স্টেশনের ১০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কাফরুল থানার আওতাধীন অংশে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
শুনানিতে যা হল
রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, “মেট্রো ট্রেনের মত একটি স্থাপনা ধ্বংস করার মত অপরাধ এরা করেছে। এদের নির্দেশে ও ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই ঘটনায় আর কারা কারা জড়িত তা জানার জন্য তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।”
অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মহসিন মিয়া, আব্দুর রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন শুনানি করেন। এরপর আদালত আসামিদের বক্তব্য শুনতে চান।
মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপিসহ সব সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। আন্দোলনে সবার ছেলেই নেমেছে। কারণ ঢাবিতে তাদের ভাইদের ওপর হামলা করা হয়েছে। পাখির মত ছাত্রদের গুলি চালিয়ে মারলেন। জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে নিতে সারা দেশে ১১ হাজার নেতাকর্মীকে জেলে ঢোকালেন।
“মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে। রিমান্ড ছেলের হাতের মোয়া না যে চাইলেই দিতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে আজকের এই আসামিদের বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে হাত, পা ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। তাদের ফিজিক্যাল অবস্থা দেখবেন। যে টর্চার করছে সমস্ত শরীর ইনজুরড। নুরকে তো পঙ্গু করে দিয়েছে। আগে তাদের বাঁচান, বাঁচার পর যত পারেন টর্চার করেন।”
নুরের পক্ষে তার আইনজীবী বলেন, “নুরকে ২০ জুলাই রাত ৩টার দিকে বনানী থানার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে ৩৯/৪০ ঘণ্টা গুম করে রাখা হয়। টর্চার করা হয়। পরিবারসহ আমরা সব এজেন্সিতে খবর নিয়েও তার সন্ধান পাইনি। মিডিয়ায় খবর প্রকাশের পর ২১ তারিখ তাকে আদালতে আনা হয়।
“তারপর পাঁচ দিনের রিমান্ড দেন আদালত। রিমান্ডে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। রিমান্ড শেষে পুলিশের কাঁধে করে তাকে আদালতে আনা হয়। ফাঁসির আসামিকেও সুস্থ করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সে অসুস্থ। আগে সুস্থ হোক, তারপর রিমান্ড দেন।”
এদিন আসামিদের চিকিৎসা, প্রথম শ্রেণির মর্যাদা ( ডিভিশন) চেয়েও আবেদন করা হয়। পরে আদালত আসামিদের বক্তব্য শোনেন। এরপর আদালত চিকিৎসা, ডিভিশনের আবেদন নথিভুক্ত করেন। এ ছাড়া আসামিদের খাওয়ার ব্যবস্থা ও ওষুধ সরবরাহের নির্দেশ দেন।
বিচারকের কাছে যা বললেন আসামিরা
প্রথমে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, “আগে আমাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। সেখানে নির্যাতন করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আমাদের কোনো চিকিৎসা হয়নি। যে অবস্থায় ছিলাম সে অবস্থায় নিয়ে এসেছে। দুপুরে খাওয়া-দাওয়াও হয়নি। আমাদের কাপড়-চোপড়ও আনতে পারিনি। আমাদের রিমান্ড না দিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। আর আমাদের যেন সরাসরি রিমান্ডে না নেওয়া হয়। আমরা আগে জেলহাজতে যাই।”
এরপর নুর বলেন, “রিমান্ডে নিয়ে আমাকে টর্চার করা হয়েছে। আমার হাতে দাগ পড়ে গেছে। আমাকে যদি আবার রিমান্ডে নেওয়া হয় তাহলে জায়গাটা পচে যাবে। আমি মারা যাব। আপনি চাইলে মেডিকেল চেকআপ করে দেখতে পারেন।”
গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমি বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল। আমার বয়স ৬৬ বছর। রিমান্ডের বিষয়ে হাই কোর্টের ডিরেকশন আছে। কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। ডিরেকশনটা ফলো করা হচ্ছে কি না দেখবেন। না খাইয়ে জেলখানা থেকে আমাদের নিয়ে এসেছে। বলে অফিসে আসেন। এরপর আদালতে নিয়ে এসেছে। প্রসিকিউশন একটা পক্ষ আর আমরা একটা পক্ষ। রিমান্ড চাইলেই যে দিতে হবে বিষয়টা এমন না।”