আতশবাজি ও ফানুস আমদানি, উৎপাদন, বিক্রি ও সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা চায় ক্যাপস
Published : 27 Dec 2024, 07:22 PM
আতশবাজি পোড়ানোর কারণে মানুষ ও জীববৈচিত্রের তিন ধরনের বিপর্যয় ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের একজন শিক্ষক।
শুক্রবার সকালে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম. শহিদুল ইসলাম এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “আতশবাজি পোড়ানোর কারণে মানুষের সাংস্কৃতিক বিপর্যয়, শারীরিক বিপর্যয় এবং জীববৈচিত্র্যের বিপর্যয় ঘটছে।”
‘নববর্ষ উদযাপনের সময় আতশবাজি পোড়ানোর কারণে বায়ু ও শব্দ দূষণের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ এবং আতশবাজি ও ফানুশমুক্ত নববর্ষ উদযাপনের দাবিতে’ জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সেখানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ক্যাপস এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাত বছরে নববর্ষ উদযাপনের সময় ক্যাপস পরিচালিত গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের নববর্ষে রাত ১১ থেকে ১২টার তুলনায় পরবর্তী এক ঘণ্টায় বায়ু দূষণের পরিমাণ প্রায় ৩৬ শতাংশ ও শব্দদূষণ ১০২ শতাংশ বেড়েছিল।
অপরদিকে ২০২৪ সালের নববর্ষের রাত ১১ থেকে ১২টার তুলনায় পরবর্তী এক ঘন্টায় বায়ু দূষণের পরিমাণ প্রায় ৩৫ শতাংশ ও শব্দদূষণ ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
তিনি বলেন, “মাত্রাতিরিক্ত শব্দ ও বায়ুদূষণ মানুষ, পশু-পাখি, উদ্ভিদসহ সার্বিক প্রাণ-প্রকৃতির উপর ব্যাপক খারাপ প্রভাব ফেলছে।
“আতশবাজি এবং ফানুসের পরিবর্তে আলোকসজ্জা, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করা এবং সীমিত শব্দে দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বছর উদযাপন করা যেতে পারে।”
তিনি বলেন, “আমরা কখনই চাই না উৎসব-আনন্দে আইনের কঠোরতার মধ্য দিয়ে পার করি। সুস্থ্য নির্মল পরিবেশই আমাদের কাম্য।”
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ থেকে ২টা পর্যন্ত তাকে নিজের ছাদে পাহারা দিতে হয়, যেন কোনো ফানুস এসে তার শখের বাগান ধ্বংস করে না ফেলে।
“নতুন বছরে আমরা সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। আমাকে যেন এই বছরেও রাত ১২টায় নিজের ঘুম নষ্ট করে বাগান পাহারা দিতে না হয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, “প্রকৃতিতে হস্তক্ষেপ করার পরিণতি কখনো ভালো হয় না। বায়ু দূষণের ফলে উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
“একটি এলাকার বায়ুদূষণ অথবা শব্দ দূষণের কারণে ওই এলাকার ইকো সিস্টেমে যত পোকামাকড় থাকে, সেগুলো নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য অন্যত্র চলে যায়। যার কারণে উদ্ভিদের প্রজননের ক্ষেত্রেও একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একটি আতশবাজি ফোটানোর কারণে যে এত বড় একটা প্রভাব বিস্তার করে সেটি আমাদের কল্পনারও বাইরে।”
আতশবাজি ও ফানুসের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছে ক্যাপস।
আতশবাজি ও ফানুসের পরিবর্তে আলোকসজ্জা, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করা এবং সীমিত শব্দে দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপনের কথা বলেছে সংগঠনটি।
সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিবেশ সুরক্ষার বার্তা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা, শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এবং অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পরামর্শ এসেছে সংবাদ সম্মেলনে।
এছাড়া নববর্ষ উদযাপনের সময় পশু-পাখি এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষা পরিকল্পনা নেওয়া, দূষণ নির্ধারণ এবং তার প্রভাব কমানোর জন্য গবেষণায় আরও বেশি তহবিল বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স-এর সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, পরিবেশবিদ, গবেষক ও লেখক আশিকুর রহমান সমী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদার, কিডস টিউটোরিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওয়াজিহা জামান।