হাই কোর্ট রায়ে বলেছে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধু ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বিধান অনুযায়ী অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে।
Published : 23 Nov 2022, 09:18 PM
ঋণ আদায়ে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলা করতে পারবে না বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধু ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বিধান অনুযায়ী অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে।
চেক প্রতারণার অভিযোগে ব্র্যাক ব্যাংকের করা এক মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর দণ্ড বাতিল করে বুধবার এ রায় দিয়েছে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে আপিলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশিক মোমেন।
মোহাম্মদ আলীর আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী বলেন, “আদালতে বিচারাধীন এ ধরনের চেক ডিজঅনারের সব মামলার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।”
অন্যদিকে ব্র্যাক ব্যাংক এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বরাইলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ব্র্যাক ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে ২০১১ সালে চার লাখ টাকা ঋণ নেন। তিন বছরের মধ্যে ৩৬ কিস্তির মাধ্যমে মোট পাঁচ লাখ ২৪ হাজার টাকা তার পরিশোধ করার কথা। কিন্তু ২০১৩ সালের অক্টোবরে ২২তম কিস্তির মাধ্যমে তিন লাখ ১৯ হাজার টাকা পরিশোধের পর আর কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি তিনি।
এরপর ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ মোহাম্মদ আলী ব্র্যাক ব্যাংকে দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯০৪ টাকার একটি চেক দেন। ওই চেকটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় ব্র্যাক ব্যাংক ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে।
ওই মামলায় ২০১৬ সালের ২০ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত মোহাম্মদ আলীকে ছয় মাসের সাজা ও দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯০৪ টাকা জরিমানা করেন।
চেক প্রতারণার মামলা এগোয় না কেন?
নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টে (এনআই অ্যাক্ট) ওই রায় হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী বকেয়া ঋণের ৫০ শতাংশ অর্থ, অর্থাৎ এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা আদালতে জমা দিয়ে ২০১৮ সালে হাই কোর্টে আপিল করেন মোহাম্মদ আলী। ওই আপিলের চূড়ান্ত শুনানির পর বুধবার রায় হল।
রায়ে মোহাম্মদ আলীকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ছয় মাসের সাজা বাতিল করেছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে আপিলের সময় মোহাম্মদ আলীর জমা দেওয়া এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা তাকে দশ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে ‘ব্ল্যাংক চেক’ গ্রাহকের কাছ থেকে নিচ্ছে, সেটা জামানত, কোনো বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে নেওয়া সেই চেকের কারণে ‘চেক ডিজঅনার’ মামলা করা যাবে না। ঋণের বিপরীতে ‘ব্ল্যাংক চেক’ নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।
বিচারিক আদালতের প্রতি হাই কোর্ট নির্দেশনা দিয়েছে, এ রায় ঘোষণার দিন থেকে ঋণ আদায়ে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক ডিজঅনার মামলা সরাসরি খারিজ করে সেসব মামলা অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দিতে হবে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ে শুধু অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে।
এ রায়ের আলোকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা জারি করতেও নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।
ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন বলেন, “রায়ে সব ধরনের ঋণে বীমা নিরাপত্তা (ইনস্যুরেন্স কাভারেজ) দেওয়ার নির্দেশনা জারি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, মোহাম্মদ আলীর কাছে সব মিলিয়ে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৭২ হাজার ১৭৩ টাকা। ২০১৩ সালের পর চক্র বৃদ্ধিহারে সুদ-আসল মিলিয়ে এ পরিমাণ টাকা হয়েছে। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।