”দুর্নীতি করে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরে সরকার কাউকে ছেড়ে দিয়েছে এমন নজির নেই,” বলেন তিনি।
Published : 01 Jul 2024, 09:56 PM
সরকারি দপ্তরগুলোতে হাতেগোনা কয়েকজনের দুর্নীতির কারণে অন্যরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন দাবি করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, সরকার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখাচ্ছে না, ভবিষ্যতেও দেখানো হবে না।
কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয় সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসার পর দেশজুড়ে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রশাসনেও দুর্নীতি ও দুর্নীতিবিরোধী বিষয়ে নিয়ে আলোচনা চলেছে। কিছু কর্মকর্তা তদন্তের মুখে পড়েছেন, আবার অনেককে বদলি করা হচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “দুর্নীতি তো সবাই করে না। যারা দুর্নীতি করছে, সরকারের নজরে এলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি করে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরে সরকার কাউকে ছেড়ে দিয়েছে এমন নজির নেই।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে অবস্থানটি পরিষ্কার করা হয়েছে। দুর্নীতির কোনো বিষয়ের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে কোনো রকম সহানুভূতি দেখানো হবে না; দেখানো হচ্ছেও না। সেটি গুরুত্বসহকারে অনুসরণ করা হচ্ছে।
তারপরও ফাঁকে ফাঁকে এ অপরাধ হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা এত কাঠামোর মধ্যে থাকার পরও হচ্ছে। এটি সব সমাজের সব জায়গায়ই হয় এবং সব কাঠামোর মধ্যেও যারা খুবই দুষ্টচিন্তার মানসিকতার, দুষ্টবুদ্ধির মানসিকতার, তারা এই কাজগুলো করতে চান। যখনই এসব বিষয় নজরে আসে সরকারের তরফ থেকে কোনো প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না।
”সরকারের সব যন্ত্র, প্রশাসন যন্ত্র দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কেউ কখনও কোনো রকমের বাধা কিংবা প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। প্রত্যেকেই এক্ষেত্রে সরকারের সব মেকানিজম দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সব সময়ই সহযোগিতা করছে।”
দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির দেরাজ খুলে বসেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ বিষয়ক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে নানাভাবে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিংস আছে। কেবল দুর্নীতি না, এর বাইরেরও অনেক বিষয়ের বিচার আমরা সেখানে করি। শৃঙ্খলাজনিত থাকে, নৈতিক স্খলনজনিত বিষয়াদি থাকে। দুর্নীতি তার একটি অংশ।
”আমার কাছে এই তথ্য নেই যে কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ রকম আমার নজরে এলে আমি আবার তদন্তের ব্যবস্থা করব।”
তিনি বলেন, দুর্নীতির বাকি অংশগুলোর জন্য আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে। আলাদা এজেন্সি আছে। প্রত্যেকেই কাজ করছে। তাদের কাছে প্রমাণযোগ্য তথ্য এলে সিরিয়াসলি সেটা নিয়ে নামে। কাজের চাপ, লোকবলের অভাব ও রিসোর্সের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
”সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হয় যে কোন কাজটা আমি আগে করবো। কারণ, ১০টা অভিযোগ থাকলে আমাদের আগে নির্ধারণ করতে হয়, কোন কাজটা আমি আগে করব। ১০টি কাজই তো আমরা একসঙ্গে করতে পারছি না।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ”কারও বিরুদ্ধে তদন্তে যখন দুর্নীতি হিসেবে সাব্যস্ত হয়, আমাকে তখন একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া মানতে হচ্ছে। আমি তো তাকে জেলে পাঠাই না। তাকে বরখাস্ত কিংবা চাকরিতে রেখে তার বিরুদ্ধে ডিপি চালু করি। ডিপি চালু আছে। প্রশ্ন ওঠে, সে এখনও চাকরি করছে?
” এটার জবাব আমি কীভাবে দেব? আমার বিধানই এমন। তাকে চাকরিতে রেখেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন দুর্নীতির পরেও সাসপেন্ড কেন করা হয়নি, সেটা হয়ত সেই কর্তৃপক্ষ জবাব দিতে পারবে। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু বহাল তবিয়তে চাকরি করবে এটা প্রশাসনের বিরল ঘটনা।”
যত্নের সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
সদ্য শুরু হওয়া ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন যত্নের সঙ্গে করতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় সংসদে রোববার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস হওয়ার পরদিন সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেন তিনি।
বৈঠকের পর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ”আজকের বৈঠকে তিনটি এজেন্ডার পাশাপাশি সদ্য পাস হওয়া বজেট নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি একটি বিশেষ নির্দেশনা সবাইকে দিয়েছেন। গতকালকে বাজেট পাস হয়েছে। বাজেট যেন খুবই যত্নের সঙ্গে, খুবই নজরদারির সঙ্গে, নিপুণভাবে, স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হয়।”
গত ৬ জুন 'টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা' শিরোনামে এ বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হোসেন মাহমুদ আলী।
৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের উন্নয়ন ব্যয় এবার ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। বাজেটের ব্যয় মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার একটি যোগান ধরা হয়েছে। ব্যয় পরিকল্পনায় ঘাটতির বাকি অর্থ যোগান দেওয়া হবে দেশ-বিদেশি ঋণ থেকে।
অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন।
নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখা এবং ৬.৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।