এ মামলায় নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ঢাকা ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালত।
Published : 26 Jun 2024, 04:16 PM
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশের টাকা আত্মসাতের মামলায় নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে আবেদন করেছেন দুই অভিযুক্ত আইনজীবী।
এরা হলেন জাফরুল হাসান শরীফ ও ইউসুফ আলী।
জাফরুল হাসান শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১-এ ধারায় করা আবেদনটি বুধবার বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি মো. আলী রেজার বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির তালিকায় ছিল। প্রাথমিক শুনানি শেষে এক সপ্তাহের জন্য আবেদনটির শুনানি স্থগিত করেছেন আদালত। অবকাশ শেষে নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি হবে।
জাফরুল হাসান শরীফ বলেন, “আমরা তো ইউনূসের মামলায় তার বিপক্ষের আইনজীবী, শ্রমিকদের পক্ষে। কিন্তু আমাদের এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। এখনও ইউনূসের বিরুদ্ধে করা ২৮টি মামলায় আমি আইনজীবী।”
তবে মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে এখনও এ ধরনের কোনো আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখনও অভিযোগ গঠনের সার্টিফাইড কপি পাইনি। তাই আমরা এখনও হাই কোর্টে এ ধরনের কোনো আবেদন করিনি।”
গত ১২ জুন এই দুই আবেদনকারী ও ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ সৈয়দ আরাফাত হোসেন। আগামী ১৫ জুলাই এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ২০২৩ সালের ৩০ মে এ মামলা দায়ের করেন। তার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ’ করেছেন। সেই অর্থ ‘অবৈধভাবে স্থানান্তর’ করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ড. ইউনূস ও নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। তবে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয় এক দিন আগেই।
গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট চুক্তি হয় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল।
এজাহারে বলা হয়, সেটেলমেন্ট চুক্তিতেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। ‘ভুয়া’ সেটেলমেন্ট চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থানান্তর করা হয় ২০২২ সালের ১০ মে।
পরে ২২ জুন অনুষ্ঠিত ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।
অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামীয় ডাচ বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়।
কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের পূর্বেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামান, মাইনুল ইসলাম ও ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে ৩ কোটি টাকা করে স্থানান্তর করা হয়।
একইভাবে আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ৪ কোটি টাকা ও দি সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে ৫ কোটি টাকা এবং আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ হিসাবে ৬ কোটি স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না।
দুদকের রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেটেলমেন্ট চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ‘অসৎ উদ্দেশে জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে উক্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।’
অর্থ আত্মসাৎ মামলায় অভিযোগ গঠন: হাই কোর্টে যাবেন ইউনূস
অর্থ আত্মসাৎ: ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছে আদালত
নোবেলজয়ী ইউনূস এবার আত্মসাতে অভিযুক্ত