“শুনানি চলাকালে একজন নিরপরাধ নাগরিককে একটা লোহার খাঁচার ভেতরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়টি অত্যন্ত অপমানজনক। অনেক হয়রানির মধ্যে আছি। সেটারই অংশ, এটা চলতে থাকবে।”
Published : 12 Jun 2024, 02:40 PM
অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং মামলায় অভিযুক্ত গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই বিচারের আয়োজন হয়েছে তাকে ‘হয়রানি’ করার জন্য।
বুধবার দুদকের এ মামলায় অভিযোগ গঠনের পর আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মানি লন্ডারিং, আত্মসাৎ, প্রতারণা এ জিনিসগুলোর সাথে আমি কোনোদিন যুক্ত আছি জানি না। আমি এগুলো শিখি নাই, করি নাই কোনোদিন। কাজেই হঠাৎ করে প্রকাণ্ড এই শব্দ আমার উপর আরোপ করা হচ্ছে।”
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং ওই অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে দুদক। মামলার বাকি আসামিরাও গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন এদিন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৫ জুলাই দিন ঠিক করে দিয়েছেন তিনি।
এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় গত ১ জানুয়ারি ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল আদালতে আপিল করেছেন ইউনূস।
তিনি বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। সরকারের দিকে ইংগিত করে ইউনূস বলে আসছেন, তিনি ‘হয়রানির’ শিকার।
অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ইউনূস। সেখানে তিনি সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। সাংবাদিকরা জানতে চান, আনুষ্ঠানিকভাবে এ মামলায় অভিযোগ গঠন হল, এটাকে তিনি ‘হয়রানি’ কেন বলছেন।
উত্তরে ইউনূস বলেন, “যেটার বিচার হবে, সেটা বুঝতে পারছি না আর কি। এটাই হচ্ছে হয়রানি। আমার কাছে, আমার সহকর্মীদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। আমরা সারাজীবনতো মানুষের সেবাতেই কাটিয়ে দিই। সেবা করার জন্য অর্থ আত্মসাৎ করতে আমরা আসিনি। অর্থ ব্যয় করার জন্য এসেছি।”
আদালতে আসামিকে লোহার খাঁচায় রাখার যে নিয়ম, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউনূস।
তিনি বলেন, “শুনানি চলাকালে একজন নিরপরাধ নাগরিককে একটা লোহার খাঁচার ভেতরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়টি অত্যন্ত অপমানজনক। অনেক হয়রানির মধ্যে আছি। সেটারই অংশ, এটা চলতে থাকবে।
“আজকে সারাক্ষণ খাঁচার মধ্যে ছিলাম আমরা সবাই মিলে। যদিও আমাকে বলা হয়েছিল যে, আপনি থাকেন। আমি বললাম, সবাই যাচ্ছে, আমিও সঙ্গে থাকি। সারাক্ষণই খাঁচার ভেতরে ছিলাম।”
ইউনূস বলেন, “যারা আইনজ্ঞ আছেন, বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত আছেন, তারা পর্যালোচনা করে দেখুন, এটা (খাঁচা) রাখার দরকার আছে? নাকি সারা দুনিয়ায় সভ্য দেশে যেভাবে হয়, আমরাও সভ্য দেশের তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারি?”
ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬ সালে ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। সরকারের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইউনূস এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
২০১১ সালে অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তার পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বছর মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়, তখন তার বয়স প্রায় ৭১।
ইউনূস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে যান এবং দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আপিল বিভাগের আদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব হারান।