“আমি দেশে ফিরছি, গিয়ে দেখব সেখানে কী হচ্ছে এবং যে সমস্যার মধ্যে আমরা আছি, সেখান থেকে কীভাবে বের হতে পারি।”
Published : 08 Aug 2024, 12:42 AM
তুমুল গণ আন্দোলন ও সহিংসতার মধ্যে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
রয়টার্স লিখেছে, এ দায়িত্ব নিতে বুধবার ফ্রান্সের প্যারিসে উড়োজাহাজে ওঠার আগে বিমানবন্দরের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশের ‘নতুন’ বিজয়ের সর্বোত্তম প্রয়োগ ঘটানো হবে বলেও রয়টার্সকে দেওয়া বক্তব্যে তুলে ধরেন মুহাম্মদ ইউনূস।
গণ আন্দোলন ও জনরোষের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। ওই দিন রাতেই বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। তারপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্বয়কদের পক্ষে ঘোষণা আসে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তারা ইউনূসকে চান।
বুধবার প্যারিস থেকে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের ঘটনাকে বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় বিজয়’ হিসেবে বর্ণনা করে দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরেয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ড. ইউনূস।
এ দিনে সন্ধ্যায় সেনাসদরে সংবাদ সম্মেলনে এসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে বলে তথ্য দেন।
সেনাপ্রধান বলেন, তার সঙ্গে ড. ইউনূসের কথা হয়েছে। তার মনে হয়েছে তিনি কাজটি করতে খুবই আগ্রহী।
রয়টার্স বলছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত ড.ইউনূস জামিনে পেয়ে প্যারিসে যান চিকিৎসা করাতে।
শেখ হাসিনার পতনের পর সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। বিশেষ করে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে। সহিংসতার শিকার হয়েছে অনেক সংখ্যালঘু পরিবার।
প্যারিসে ফ্লাইটে ওঠার আগে বিমানবন্দরের বাইরে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি আন্তরিকভাবে বলছি, সবাই শান্ত থাকুন। সব ধরনের সহিংসতা থেকে দূরে থাকুন।”
“আমি দেশে ফিরছি, গিয়ে দেখব সেখানে কী হচ্ছে এবং যে সমস্যার মধ্যে আমরা আছি, সেখান থেকে কীভাবে বের হতে পারি।”
ড. ইউনূস বলেন, ফিরে গিয়ে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব। এই পুরো প্রেক্ষাপটে আমি নিজেকে নতুনই বলব।”
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ৮৪ বছর বয়সি ড. ইউনূসকে অনেকবার ‘সুদখোর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন শেখ হাসিনা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও সেগুলোতে তার দণ্ড হওয়ার জন্য শেখ হাসিনার ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছেন ড. ইউনূস।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. ইউনূসের ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছিল। বুধবার তার সাজা বাতিল করেছে ঢাকার শ্রম আদালত।
এ দিন ঢাকায় ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোরশেদ বলেন, ড. ইউনূস দুবাই থেকে ফ্লাই এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন।
মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত হয়।
বুধবার সেনা সদরে সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হতে পারে। অনুষ্ঠানটি আয়োজনের চেষ্টা চলছে। হয়ত ৪০০ জনের উপস্থিতি এখানে থাকবে।”
নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এ সরকারের উপদেষ্টা ১৫ জন হতে পারে বলে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, তবে তা কম-বেশিও হতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন সেনাপ্রধান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ আগে ড. ইউনুসের সঙ্গে আমার কথা হল। ওনার সাথে কথা বলে আমার খুব ভালো লাগল। আমার কাছে মনে হয়েছে এই কাজটা করার জন্য উনি অত্যন্ত আগ্রহী।
”আমি নিশ্চিত উনি আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন এবং আমরা এ থেকে উপকৃত হব।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে ড. ইউনূস দেশে আসছেন জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “আমি ওনাকে রিসিভ করতে যাব। আমরা ওনাকে সর্বতভাবে সহায়তা (করব)। আমরা সবাই তাকে সহযোগিতা করলে উনি অত্যন্ত সফলভাবে ওনার এ কাজ সমাধা করতে সক্ষম হবেন।”
তিনি বলেন, সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে। সবাই মিলে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ সক্ষম হবে ঘুরে দাঁড়াতে।
“তিন বাহিনী জনগণের সাথে আছে। সুন্দর ভবিষ্যতে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।”