“ড্যাপ আইনে বৈষম্য রয়েছে। যার কারণে কেউ লাভবান হচ্ছে, কেউ পিছিয়ে পড়ছে,” বলছে ইন্সটিটিউট।
Published : 02 Sep 2024, 05:31 PM
‘পরিকল্পিত ঢাকা’ গড়তে গত সরকারের সময়ে প্রণিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে এর বাস্তবায়ন স্থগিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের বক্তব্য এবং প্রত্যাশা’ শীর্ষক প্রেস বিফিংয়ে এ দাবি তুলেন সংগঠনের সহ সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী নকী।
তিনি বলেন, “বাতিল করতে পারলে ভালো। না হলে ইমিডিয়েট স্থগিত করতে হবে। ড্যাপ আইনে বৈষম্য রয়েছে। যার কারণে কেউ লাভবান হচ্ছে, কেউ পিছিয়ে পড়ছে। এটাকে স্বচ্ছ করার জন্য, দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য যা যা করার করতে হবে।”
২০২২ সালের ২৪ অগাস্ট নতুন ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) কার্যকরের গেজেট প্রকাশ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কিছু জায়গায় ছাড় দিয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ড্যাপ সংশোধন করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
তাতে সরকারি-বেসরকারি আবাসন, অপরিকল্পিত এলাকা, ব্লক-ভিত্তিক আবাসন, একত্রীভূত প্লটে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) সুবিধা বাড়ানো হয়। পাশাপাশি ভবনের প্রশস্ততা ও উচ্চতা বাড়ানোরও সুযোগও বাড়ে। ভবন নির্মাণে সামনের সড়কের প্রশস্ততার ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হয়।
স্থপতি ইন্সটিটিউটের প্রেস বিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে নাগরিক সুবিধা ব্যবহারে বৈষম্য দূর করা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করা, দেশের আবাসন সমস্যা দূর করতে কার্যকর সমাধান, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি, হয়রানি এবং অবৈধ দখলদারত্ব দূর করা, নগরায়নের সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয় এবং দক্ষতা বাড়াতে সংস্কার, তরুণ স্থপতিদের কর্মসংস্থান বাড়ানো, নগর সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানে পেশাজীবী এবং বিশিষ্টজনদের অন্তর্ভুক্তি, পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণে নীতিমালা তৈরিসহ বিভিন্ন দাবি ও পরামর্শ তুলে ধরেন অধ্যাপক নকী।
সেখানে বলা হয়, “ঢাকার জন্য প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-৩৫) বা ড্যাপ প্রণয়নের প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা এবং অসম্পূর্ণতা বিবেচনা করে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট মনে করছে, এই পরিকল্পনা অবিলম্বে স্থগিত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুসরণ করে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) সংক্রান্ত বিষয় সংশোধন করে নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রণয়নে পদক্ষেপ নিতে বলা হয় লিখিত বক্তব্যে।
স্থপতি ইন্সটিটিউট বলছে, ড্যাপ প্রণয়নের আগে ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান ২০১৬ সালে প্রণয়ন করলেও তা গেজেটভুক্ত না করে ‘আইনি ব্যত্যয় ঘটিয়ে’ দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের পর ২০২২ সালে ড্যাপ গেজেটভুক্ত করা হয়।
ইন্সটিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার সাব্বির আহমেদ বলেন, “রাজউক বলছে ঢাকায় এত লোক থাকা যাবে না। কারণ এতজনের নাগরিক সুবিধা নাই। তবে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে ভবনের উচ্চতা বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া যেত। সেটা যদি কমিয়ে রাখা হয়, এটার দোষ নাগরিকদের নয়; বরং যারা শহর পরিচালনা করে, তাদের এটা নিশ্চিত করা উচিত ছিল এখানে গ্যাস দরকার, বড় রাস্তা দরকার।
“নগরায়নের জন্য এখানে যে দিক নির্দেশনা পাওয়ার কথা ছিল, ড্যাপ থেকে এই ব্যাপারে নাই। পরিকল্পিত নগরায়নের গাইডলাইন দিতে হবে রাষ্ট্রকে, রাজউক বা যারা আছে। আমি শুধু ঢাকার কথা বলছি না, সব শহর নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।”
সাব্বির আহমেদ বলেন, “এই চিন্তা ভাবনা করা, রিসার্চ করার দায়িত্ব রাজউকের। রাজউক প্লট বাণিজ্য বন্ধ করুক। প্লট বাণিজ্যে মনোনিবেশ করে রাষ্ট্রের জন্য যে কাজগুলো করা দরকার ছিল, সে ক্যাপাসিটি তারা হারিয়েছে। রাজউককে আমরা মনে করি ঢেলে সাজানো উচিত। রাজউকের নিচু স্তরগুলোতে আরও বিপদজনক অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে।”
রাজউজকের চেয়ারম্যানের যে ক্ষমতা ও দায়িত্ব রয়েছে তার উপর একটি গভর্নিং কাউন্সিল থাকা উচিত বলে মত দেন অধ্যাপক সাব্বির।