এ ঘটনায় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির ‘দায়’ দেখছেন গোয়েন্দারা।
Published : 03 Nov 2022, 04:47 PM
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালকের (প্রশাসন) কক্ষে প্রশ্নপত্র ফটোকপি করার সময় ছবি তুলেছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালেকর দপ্তরের এক কর্মী; এরপর সেটি অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন জনের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে মহানগর পুলিশের ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, “বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি যাহিদ হোসেনই পরিচালক প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রশ্নফাঁসে এমডির দপ্তরের কর্মী ও তার গাড়িচালকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।”
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এমডির দপ্তরের দুই অফিস সহকারী (এমএলএসএস) জাহিদ হাসান ও সমাজু ওরফে সোবহানসহ বিমানের আরও পাঁচ কর্মীকে গ্রেপ্তারের তথ্যও জানান এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
তবে ‘বিমানের এমডির কক্ষ থেকে প্রশ্নফাঁস হয়েছে’- এমন বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্সটির এমডি যাহিদ হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পরিচালক প্রশাসনের কক্ষ আর এমডির কক্ষ আলাদা। একটা তিন তলায় আর একটা দোতলায়।
“আমরা তদন্তে সহায়তা করছি। প্রশাসনিক তদন্তও চলছে। আমি শুধু বলতে চাই, বিমানের এমডির কক্ষ থেকে প্রশ্নফাঁস হয়েছে- এই কথাটি ঠিক নয়।”
গত ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ বিমানের কারিগরি ১২টি পদে নিয়োগের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার আগেই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পাঁচজন গ্রেপ্তার হলে পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয় বৃহস্পতিবার।
এ নিয়ে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলায় বিমানের ১০ কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। এদের মধ্যে নয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান ডিএমপির ডিবি প্রধান।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, নিয়োগপরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা ২০ অক্টোবর ৮০টি প্রশ্ন প্রণয়ন করেন। ৮০ নম্বরের পরীক্ষা ছিল, এক ঘণ্টা সময়। প্রশ্নটি তৈরির পর তা ফটোকপি করে পরীক্ষার্থীদের দেওয়ার কথা ছিল। সেজন্য পরিচালক প্রশাসনের কক্ষে থাকা ফটোকপিয়ার ব্যবহার করে সেই প্রশ্নপত্রের ফটোকপি করছিলেন এমডির দপ্তরের এমএলএসএস জাহিদ হাসান।
“ফটোকপি করার সময়ই জাহিদ একটি প্রশ্নের দুই পাশের ছবি তুলে আরেক এমএলএসএস সমাজু ওরফে সোবহানের (৩০) কাছে পাঠায়। এরপরেই তারা সেটিকে অর্থের বিনিময়ে ছড়িয়ে দেয়।”
জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, “এই প্রশ্নপত্র প্রণয়নের মূল দায়িত্ব ছিল মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রশাসনের।”
প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে এমডি বা জিএমের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছিল। তাদের দায়িত্ব ছিল প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশি করে কক্ষে ঢোকানো ও বের করা এবং নজরদারি করা। তারা সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ঘটনায় তাদের দায় আছে।
“আমরা ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের বলা হয়েছে, যাদের দায় আছে তারা কেউ ছাড় পাবে না।”
বিমানের এমডি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে হারুন বলেন, “আমরা কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি, কারও সঙ্গে সরাসরি।”
প্রশ্নফাঁসে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা এখন পর্ন্ত ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছি।”
গত ২২ অক্টোবর ওই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর ডিবি প্রধান বলেছিলেন, প্রশ্নের দর প্রথম দিকে সাত লাখ, পরে দুই লাখে নেমে আসে। শুধু তাই নয়, গরীব মানুষ যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের জমি এবং বাড়ি লিখে নেওয়ার জন্য নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করে এই চক্র, যার কয়েকটি উদ্ধার করা হয়েছে।”
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তাররা হলেন- আওলাদ হোসেন (২১), জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), এনামুল হক (২৮), হারুন অর রশীদ (৪০), মাহফুজুল হক (৩১), মো. মাসুদ (৩৪), জাহিদ হোসেন (২৮), সমাজু ওরফে সোবহান (৩০), জাবেদ হোসেন (২৮) ও জাকির হোসেন (২৯)। এদের মধ্যে প্রথম পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিমান।
তাদের কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩২টি চেক, ১৭টি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, তিনটি ডায়েরি, ফাঁস হওয়া প্রশ্নের কপি এবং নিয়োগপ্রার্থীদের ৫৪টি প্রবেশপত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
বিমানের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে ধরা ৫ কর্মী; পরীক্ষা স্থগিত