“বাংলাদেশের উন্নয়ন সেক্টরে কারিতাস পথ প্রদর্শক, বাতিঘর,” বলেন রাশেদা কে চৌধুরী।
Published : 12 Nov 2022, 11:46 PM
মুক্তিযুদ্ধের পর দেশগঠনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসের ভূমিকা প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
শনিবার ঢাকার নটর ডেম কলেজ প্রাঙ্গণে কারিতাসের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের জাতীয় পর্যায়ের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “কারিতাস শুধু আর্থ সামাজিকভাবে কাজ করে নাই, অবকাঠামো উন্নয়নেও কাজ করেছে। বাংলাদেশ দারিদ্র বিমোচনে অসাধারণ অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশ আর এখন পরনির্ভরশীল নয়।
“কারিতাস মানে ভালোবাসা। এ ভালোবাসা মানবতার জন্য, যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল মানুষের।“
দুর্যোগকালীন কারিতাসের কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, “আমার এলাকা নেত্রকোণাসহ হাওর অঞ্চলে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল কারিতাস। দুর্যোগকালে দেশব্যাপী অনুরূপ কার্যক্রম কারিতাসকে অনন্য দক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।”
সারা দেশে গ্রাম পর্যায়ে নেতৃত্ব বিকাশে কারিতাস জনসংগঠন গড়ে তুলেছিল জানিয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন সেক্টরে কারিতাস পথ প্রদর্শক, বাতিঘর। কারিতাস সরকারের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছে। কারিতাস এগিয়ে যাক এই কামনা করি।”
ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চ বিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ বলেন, কারিতাস বাংলাদেশ তার নিজস্ব দর্শন অজর্নের লক্ষ্যে বাস্তবে কাজ করে যাচ্ছে।
শনিবার সকাল ৯টায় শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর জাতীয় পতাকা ও কারিতাস পতাকা উত্তোলন, ফেস্টুনসহ বেলুন ও পায়রা উড়ান, স্টল উদ্বোধন, জুবিলি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, অতিথিদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান, কারিতাস পদক প্রদান, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিএসসির কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, কারিতাসের নির্বাহী পরিচালক সেবাস্টিয়ান রোজারিও, কারিতাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট খুলনার বিশপ জেমস রমেন বৈরাগী, সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং, আরমা দত্ত, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার ও মন্সিনিয়র মেরিনকো এন্তলোভিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক তপন কুমার বিশ্বাস, কারিতাসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ব্রাদার লরেন্স ডায়েস, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, কারিতাস এশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও।
দ্বিতীয় পর্বে তিনটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কারিতাসের কার্যক্রমের উপর বাস্তবায়িত তিনটি গবেষণা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। তৃতীয় পর্বে কারিতাস কর্মীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় দেশের উন্নয়নে কারিতাসের অবদান তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মিলনীর একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কারিতাস বাংলাদেশ। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শাখা অফিস হিসেবে কারিতাসের যাত্রা শুরু হয়।
পরে ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণের সাহায্যে ভূমিকা রাখে। পরের বছর ১৩ জানুয়ারি এটি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় এবং ১৯৭২ সালের ১৩ জুলাই সদ্য স্বাধীন দেশে সরকারের অনুমোদনের মাধ্যমে একটি জাতীয় সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কারিতাসের প্রধান কার্যালয় রাজধানীর শান্তিবাগে। এছাড়াও বরিশাল, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেটে আঞ্চলিক কার্যালয় আছে। দেশের ৫৩ জেলার ১৮৭টি উপজেলায় কারিতাস কাজ করছে। সংস্থাটির বর্তমান প্রকল্প সংখ্যা ১১২টি, ট্রাস্ট রয়েছে তিনটি এবং সুফলভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ মানুষ।