Published : 11 Jul 2023, 01:12 AM
এবার বৈশাখে গরম চরমে ওঠার পর রাজধানীতে ছাদ বাগানকে উৎসাহিত করা হয়েছিল; কয়েক মাস পর এখন বর্ষায় ডেঙ্গু প্রকট রূপ ধারণ করায় সেই ছাদবাগানই হয়ে উঠেছে উদ্বেগের কারণ।
ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশবৃদ্ধি করে বলে ছাদ বাগানের ফুলের টবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে এই উদ্বেগ।
গত বছর ঢাকার বিভিন্ন ছাদবাগান পর্যবেক্ষণ করে ১১ শতাংশ বাগানে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়ার কথা জানিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এবারও পাওয়া যাচ্ছে বলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
তবে কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলছেন, পরিচর্যা করা হয়, এমন ছাদ বাগানে মশার বংশ বৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তাছাড়া সরাসরি রোদ পড়ে, এমন স্থানে মশা ডিম ছাড়ে না।
এবার এপ্রিলে ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে রাজধানীতে সবুজায়নের উপর জোর দিচ্ছিলেন পরিবেশবিদসহ সবাই। ছাদ বাগান তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক হবে, বলেছিলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামও। ডিএনডিসির আবেদনে সরকার ছাদ বাগান থাকলে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় গৃহকরে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেয়।
তবে এখন ডেঙ্গুর মৌসুমে এইডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার আগে তা চিহ্নিত করতে ড্রোন উড়িয়ে ছাদ বাগান চিহ্নিত করতে নেমেছে ডিএনসিসি।
২০২২ সালে ঢাকা উত্তরে ড্রোনের মাধ্যমে ২ হাজার ৬০০ বাড়ির ছাদে বাগান শনাক্ত করা হয়েছিল। তার মধ্যে তিনশটিতে এইডিস মশার লার্ভা মিলেছিল।
এ বছর গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুদিনে ডিএনসিসি ৪ হাজার ৪৮৪টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৫২৮টির ছাদে বাগান পেয়েছে। এর ৪২টিতে পানির উৎস পাওয়া গেছে। তবে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে মাত্র একটি ছাদে।
এরপর শনিবার গুলশানের ১০৮ নম্বর এবং ১১৭ নম্বর সড়কের কয়েকটি বাড়ি পরিদর্শন করেন সিটি করপোরেশনের মশক নিবারণ দপ্তরের কর্মীরা। এ সময় তারা দুটি বাড়ির ছাদবাগানে এইডিস মশার লার্ভা পান। এদিন গুলশানের আরও কয়েকটি বাড়ির ছাদ বাগানে গিয়ে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি।
ডিএনসিসির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাদের বাগানটা বেশিরভাগ মানুষই শখে করেন। পানি জমলে গাছটা মরে যায়, যার জন্য নিজ দায়িত্বে তারা পানি জমতে দেন না। তবে বাগানে পড়ে থাকা খালি টব, উল্টো করে রাখা টব বা অন্য কোনো পাত্রের জমা পানিতে লার্ভা জমে।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ছাদ বাগান এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লার্ভার জন্য ছাদ বাগান অবশ্যই খুব একটা ভালো সোর্স। বাগানের টবের নিচে যে প্লেট দিয়ে রাখে ওই প্লেটট থাকে অনেক জায়গায় ওই প্লেটে মশার লার্ভা পাচ্ছি।”
তবে মশা বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাদ বাগানে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে পরিত্যক্ত ছাদবাগান হলে সেখানে লার্ভা পাওয়া যেতে পারে।”
তিনি বলেন, “সত্যি বলতে, মাঠ পর্যায়ে যখন আমরা কাজ করতে যাই ছাদে বা ছাদের বাগানে, আমরা অনেক বেশি মশা পাই না।”
এর কারণ ব্যাখ্যা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, “ছাদে সব সময় সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে। তাই সেটি সব সময় গরম থাকে। গরম জায়গায় লার্ভা হবে না।”
ডেঙ্গু: ছয় বাড়ি ঘুরে ৫টিতেই মিলল এইডিসের লার্ভা
ঢাকার ১৮% বাড়িতে এইডিসের লার্ভা, ডেঙ্গুর বড় ঝুঁকি
ডেঙ্গু: হাসপাতালে ভর্তি-মৃত্যু দুটোতেই রেকর্ড
যেখানে ঝুঁকি বেশি, সেখানে যাওয়ার সুযোগ কম
ছাদবাগানের বাড়ির নিচের কিংবা বারান্দা, বেলকনির বাগানে মশার বংশবিস্তার বেশি ঘটতে পারে বলে ড. কবিরুল বাশার জানান।
তিনি বলেন, “নিচতলায় বা বারান্দায় যেখানে আলো পড়ে কম, পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকে, সেখানে মশার লার্ভা হতে পারে।”
গত ২৭ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপকারীদের সঙ্গে গুলশানের ১৩৬ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, নিচতলার পুরোটাই নানা ফুলের গাছে ভর্তি। বাগানে উল্টো করে রাখা একটি ফুলের টবের কোণায় জমে থাকা পানিতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।
সেদিন ওই বাড়ির মালিক নুরুন্নাহার রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোথাও যেন পানি না জমে, সে নির্দেশনা তিনি বাগানের মালিকে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ঈদের ছুটিতে গেছেন, এ কারণে অসতর্কতাবশত টবে পানি জমে থাকতে পারে
ডেঙ্গুর বিস্তারের মধ্যে বর্ষায় বাড়ির ছাদ, বারান্দা, কার্নিশ আর আঙ্গিনার টব, ট্রে ও বোতল নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার তাগিদ এসেছে কীটতত্ত্ববিদ ও নগর কর্তৃপক্ষের তরফে। কারণ এসব স্থানে জমে থাকা পানি মশার প্রজননের জন্য আদর্শ স্থান হয়ে উঠতে পারে।
এইডিস মশা নিয়ে গত ১৮ থেকে ২৭ জুন ঢাকার ৯৮টি ওয়ার্ডে প্রাক-বর্ষা মৌসুম জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। এজন্য বসান হয়েছিল ৩ হাজার ১৯০টি ভেজা পাত্র।
তাতে দেখা যায়, ৭২২টিতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
ডিএনসিসির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাড়ির বারান্দা, নিচতলা বা আঙিনায় যেখানে বাগান করা হয়েছে, সেসব জায়গায় এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে।”
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বলছেন, জরিপ বা অভিযানের সময় বেশিরভাগ বাড়ির বারান্দায় তারা যেতে পারেন না। ফলে সেখানে করা বাগানগুলোর কী অবস্থা, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জানা যায় না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত জরিপ কাজে অংশ নেওয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, “জরিপের সময় নিচতলা এবং ছাদে যাওয়া যায়, কিন্তু বারান্দায় যেতে দিতে চান না বেশিরভাগ বাড়ি মালিক। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের বারান্দায় কোথাও পানি জমে আছে কি না দেখতে বলি। তারা দেখে আমাদের জানান।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সারওয়ারও একই সমস্যার কথা জানান।
তিনি বলেন, “বেশিরভাগ বাড়ি বারান্দায় যেতে দেয় না বলে সেখানকার বাগানে লার্ভা পাওয়া যায় কি না, গেলেও সেটা কী রকম সে রকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।”