আরও মামলা থাকায় এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না আলোচিত এই হেফাজত নেতা।
Published : 03 May 2023, 03:17 PM
গ্রেপ্তারের দুই বছর পর ৫ মামলায় হাই কোর্ট থেকে জামিন পেলেন আলোচিত ধর্মীয় বক্তা ও হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।
তবে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকায় এখনই তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না।
রাজধানীর পল্টন ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় করা মামলাগুলোতে বুধবার মামুনুলকে জামিন দেয় বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
মামুনুল খেলাফতে মজলিস নামে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। গ্রেপ্তারের সময় তিনি হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। তবে পরে তাকে সংগঠনটি থেকে বাদ দেওয়া হয়।
আদালতে মামুনুল হকের পক্ষে জামিন শুনানি করেন হেলাল উদ্দিন মোল্লা আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
মামুনুলের আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতায় অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এর মধ্যে ঢাকার পল্টনের চারটি ও হাটহাজারীর এক মামলায় মামুনুলের বিষয়ে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট। সেই রুল ‘যথাযথ’ ঘোষণা করে এই পাঁচ মামলায় তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
এ আইনজীবী বলেন, “তার (মামুনুল) বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে। এ কারণে তিনি এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না।“
২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতা করে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক দলগুলোর সহিংসতার ঘটনায় আলোচিত ছিলেন মামুনুল।
সে সময় ঢাকায় বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জে হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব থাকলেও সংগঠনে মামুনুলের প্রভাব ছিল ব্যাপক। সংগঠনের নীতি নির্ধারণে তার ভূমিকাও ছিল স্পষ্ট। একের পর এক ঘটনা শেষে ওই বছর ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে তিনি এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন।
সঙ্গে থাকা নারী সঙ্গীকে নিজের স্ত্রী দাবি করার পর অনুসারীরা হামলা করে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়। পরে সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় হেফাজত কর্মীরা।
এরপর অভিযান শুরু করে পুলিশ। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত হয়। ১৮ এপ্রিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার হন মামুনুল।
এছাড়া সহিংসতার ঘটনায় একাধিক মামলা করে পুলিশ। রিসোর্ট সঙ্গীনীও তার বিরুদ্ধে করেন ধর্ষণ মামলা। সেই সঙ্গে শাপলা চত্বরে সহিংসতার মামলাগুলোও সামনে আসে।
ওই বছরের জুনে হেফাজত থেকে রাজনৈতিক নেতাদের বাদ দেওয়া হয়। মামুনুলের পাশাপাশি পদ হারান তার ভাই মাহফুজুল হক।
তাদের বাবা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ১৯৯৯ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে গঠন করেন চারদলীয় জোট। সে সময় কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোর জোট ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্ব দিতেন তিনি। তবে তিনি চারদলীয় জোট ছেড়ে যান সবার আগে।
তবে গত কয়েক বছরে খেলাফত মজলিস ও বিএনপির মধ্যে যোগযোগের ইঙ্গিত মিলছিল।
মামুনুলকে গ্রেপ্তারের পর কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ সে সময় বলেছিল, মামুনুল হক কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ‘উসকানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছিলেন,’ তার উদ্দেশ্য ছিল ‘সরকার উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল’ করা।
মামুনুল ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জড়িত জঙ্গিদের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন এবং তাদের একজনের সঙ্গে প্রায় দেড় মাস পাকিস্তানেও ছিলেন বলে সে সময় পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়।
পুরনো খবর
ছাত্রদের উসকে দিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় ছিলেন মামুনুল: পুলিশ
গ্রেনেড হামলার জঙ্গিদের ‘ঘনিষ্ঠ’ মামুনুল পাকিস্তানেও ছিলেন: পুলিশ
কোন ওয়াজে কে যাবেন, তাও নিয়ন্ত্রণ করতেন মামুনুলরা: পুলিশ
মামুনুলের ৩ বিয়ে, কাবিন একটির: পুলিশ
মামুনুলের রিসোর্টকাণ্ড: সোনারগাঁওয়ের ওসি রফিকুল চাকরিই হারালেন
মামুনুলের ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ নিখোঁজ জানিয়ে থানায় জিডি