আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার পর সচ্ছলতা এসেছে অনেকেরই জীবনে।
Published : 10 Jun 2024, 08:52 PM
“কখনো কল্পনাও করিনি নিজের জায়গা হবে, নিজের ঘর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। উনার জন্য ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন অনেক ভালো আছি।”
মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার তরফে দুই বছর আগে পাওয়া ঘরে জীবন বদলে যাওয়ার কথা বলছিলেন কামাল হোসেন।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের টিএনটি হাজেম রাস্তা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮৮টি ঘরের একটি কামালের। ২০২২ সালে দেশের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি এখানকার ঘর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কামাল বলছিলেন, “আমাদের জীবন বদলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ভালো রাখবেন, সুস্থ রাখবেন।”
কাজের বিনিময়ে অন্যের বাড়িতে থাকতে গিয়ে নানা ধরনের হয়রানি-অপদস্তের শিকার হতে হয়েছে কামালদের। আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে একদিকে আবাসন নিয়ে দুশ্চিন্তা কেটেছে কামালের, সেই ফুরসতে উখিয়া বাজারে মুদি দোকান চালিয়ে সচ্ছলতাও দেখতে পাচ্ছেন তিনি।
কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার ছেলে-মেয়েসহ ছয়জন থাকি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই বাড়িতে। এখন চার ছেলে-মেয়ে সবাই লেখাপড়া করে। বড় ছেলে আরিফুর রহমান ৩০ তারিখ এইচএসসি দিবে। বাকিরাও স্কুলে যায়।
“আগে অন্যের বাসায় থাকতাম। এরপর শ্বশুরবাড়ি টেকনাফে থাকতাম। ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী ঘর দিলে তখন থেকে পরিবার নিয়ে এখানে থাকি। এখন দিন খুব ভালো যায়, এখন বাসাভাড়া দিতে হয় না। টাকাও জমাতে পারছি। শেখ হাসিনার জন্য জীবন বদলে গেছে।"
টিএনটি হাজেম রাস্তা আশ্রয়ণ প্রকল্পে একই সময়ে ঘর পেয়েছেন রহিমা বেগম।
তিনি বলেন, “স্বামী নুরুল কবির আর তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছেলে এক মেয়েসহ চারজন থাকি। বড় মেয়ে স্বামীর সঙ্গে অন্যের বাসায় ভাড়া থাকে। আগের থেকে খুব ভালো আছি। ছেলে মেয়ে অনেক বড় হবে, এই স্বপ্নটাই এখন দেখি।"
কামালের মতোই কাজের বিনিময়ে অন্যের বাড়িতে একসময়ে থাকতে হতো জানিয়ে রহিমা বলেন, “আমার স্বামী চায়ের দোকানে কাজ করেন, যে টাকা পায় তা দিয়ে খাওয়া-দাওয়া চলে, কিন্তু ভাড়া বাসা নিয়ে থাকার সুযোগ ছিল না। গত দুই বছরে আমাদের মনমানসিকতাই পরিবর্তন হয়ে গেছে।
“শেখ হাসিনার দেওয়া বাড়িতে থাকি যে তা না, তিনি বাড়ি আমাদের নামে লিখে দিয়েছেন, এটা আমাদের বাড়ি। বাড়ি থেকে বের করে দিবে- এমন কোনো ভয় নাই, এটা তো আমাদের নিজের বাড়ি।"
উখিয়া সিকদারের বিল বড় বাজারে একসময় ভাড়া বাসায় থাকতেন গুলতাজ বেগম।
তিনি জানান, স্বামী মোহাম্মদ ইবরাহিম ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে গুলতাজ আশ্রয়ণের ঘরে থাকেন। বড় ছেলে রবিউল হাসান (১২) ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে, মেয়ে জান্নাতুল বাকেয়া (৮) পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে। আরেক ছেলে মোহাম্মদ হাসানের বয়স তিন বছর।
গুলতাজ বলেন, “আগে কুতুপালং পশ্চিমপাড়ায় মানুষের বাসায় ভাড়া থাকতাম। স্বামী ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। আগে রিকশা চালাতো। প্রধানমন্ত্রী ঘর দেওয়ার পর এখন ভালো আছি। আগে আমাদের জীবনে অনেক কষ্টের ছিল। ভিডা বাড়ি ছিল না, পরের জায়গায় থাকতে হতো।
“নিজেরা বাড়ি করব, এমনটা কখনো ভাবি না। তখন থাকা-খাওয়া নিয়েই কষ্ট হতো; বাড়ি করব কী করে? এখন ছেলে লেখাপড়া করছে, স্কুলে যায়। আগের থেকে আয় রোজগার বেড়েছে। লেখাপড়া শিখে ছেলে-মেয়ে অনেক বড় হবে. সেই স্বপ্নটাই এখন দেখি।"
চার ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয়ণের ঘরে ভালো আছেন জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক জোয়ার্দার বলেন, “বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার মত অবস্থা ছিল না। আগে মানুষের বাড়িতে থাকতাম, সেখানে কোনো ভাড়া নিত না। তবে আমার স্ত্রী আমি তাদের নানা কাজ করে দিতাম। এর বাইরে মানুষের বাড়িতে থাকা যে কত কষ্ট তা আপনারা বুঝবেন না। অনেক কথা শুনতে হইছে, ছেলে-মেয়েরা সবার কাছে ছোট হয়ে থাকতো।
“এখন প্রধানমন্ত্রী দুই ঘরের বাড়ি দিয়েছে, এটা আমাদের নিজের বাড়ি, ছেলে-মেয়েদের মন বড় হয়ে গেছে। সবাই এখন স্কুলে যায় পড়াশোনা করে। আমি এখন সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল ফেরি করে বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলে যায়।"
দুই ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে দুই বছর ধরে নিজের ঘরে থাকেন অটোচালক আব্দুস সালামের স্ত্রী লায়লা বেগম।
তিনি বলেন, “আরেক জনের বাড়িতে কাজ করে থাকতাম, এহন নিজের ঘরে থাকি। এর চেয়ে বেশি ভালো লাগার আর কি আছে?"
ভাগ্য বদল অন্যদেরও
টিএনটি হাজেম রাস্তা আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর মেহের খাতুনের (৪৮) জীবনেও পরিবর্তন ঘটেছে। ওই প্রকল্পের পাশেই মুদি দোকান চালিয়ে পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে তার।
তিনি জানান, নিজেদের একখণ্ড জমিতে বাড়ি থাকলেও অন্যের দোকানঘর ভাড়া নিতে হয়েছে। মাসে দুই হাজার টাকা দিতে হয়।
মেহের বলেন, “আগে গৃহিণী ছিলাম। এই প্রকল্প শুরু হওয়ার পর আমিও ভালা আছি। আগের থেকে সুন্দর করে থাকতে পারছি।"
তার স্বামী সৈয়দ আলম দিনমজুর। তাদের ঘরে আছে চার মেয়ে, এক ছেলে। ছেলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে এখন ভাড়ার গাড়ি চালায়। মেয়ে তানিসা আক্তার এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে; স্কুল থেকে এসে মায়ের দোকানে সময় দেয়।
মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তানিসা বলেন, “বড় হয়ে ডাক্তার হব, ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। আগে এতো মানুষ না আছিল। এখন ভালা হয়ি। সাতটা বাজে দোকান খুলি। রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে।"
মেহের খাতুনের দোকানে পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, তেল, লবণ, ডিম, বিস্কুট, চিপস, কোমল পানীয়, চকলেট, পানি- সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ ধরনের পণ্য মেলে। রোজকার বিক্রিবাট্টা দুই হাজার টাকার মতো বলে জানান মেহের খাতুন।
তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের কারণে আমাদের উপকার হয়েছে, দোকানদারি করতে পারছি। বেচা কেনা হয়। এটা সবার জন্যই ভালো হয়েছে।"
আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু হওয়ার পর মুদি দোকান দিয়ে সচ্ছলতা এসেছেছ তোফায়েল আহমেদেরও।
তিনি বলেন, “আগে মুলি বাঁশের ব্যবসা করতাম। এটা (আশ্রয়ণ প্রকল্প) হয়ে আমার অনেক উপকার হয়েছে। এখানে যারা থাকে তারা আমার এখান (দোকান) থেকে অনেক কিছু কেনে। তাদের কাছে মাল সামান বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে। এখানে ঘরবাড়ি না থাকলে দোকান দিতে পারতামনি। এখানে ঘর হওয়ার পর পুরো এলাতে পরিবর্তন হয়েছে।"
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, “এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৮৮টি ঘর রয়েছে। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এই ঘরগুলো উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
“যারা এই উপহারের ঘর পেয়েছেন তাদের জীবনে উন্নয়ন ঘটেছে। তাদের আত্ম সম্মান বেড়েছে আর আত্মমর্যাদা বেড়েছে।"