“রাষ্ট্রপতির শপথ তার অধীন বা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির (স্পিকার) কাছ থেকে নেওয়া উচিত নয়। কারণ স্পিকারের কার্যাবলি রাষ্ট্রপতি নিজেই পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করে থাকেন।”
Published : 11 Mar 2025, 12:02 AM
রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের শপথ পড়ানোর নিয়মের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন হয়েছে, যেখানে স্পিকারের বদলে প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে শপথ পড়ানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী সোমবার এ রিট আবেদন করেন। তার পক্ষে রিটকারী আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন ওমর ফারুক।
অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতির শপথ পড়ানোর বিধান ছিল। পরে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বিধান যুক্ত করা হয়।
“আমরা রিটে চেয়েছি, রাষ্ট্রপতি যেমন প্রধান বিচারপতিকে শপথ পড়াবেন, তেমনি রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়াবেন প্রধান বিচারপতি।”
রিট আবেদনে আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বিবাদী করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, “ধূর্ত, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা স্বেচ্ছাচারীভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণ নতুন একটি বাংলাদেশর স্বপ্ন দেখেছে, যে বাংলাদেশের প্রকৃত মালিক হবে জনগণ। দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং আইন বিভাগ জনগণের সেবায় নিয়াজিত হবে।
“রাষ্ট্রের মালিক হিসাবে নাগরিকের অধিকার সমুন্নত রাখতে রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্রপতির শপথ তার অধীন বা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির (স্পিকার) কাছ থেকে নেওয়া উচিত নয়। কারণ স্পিকারের কার্যাবলি রাষ্ট্রপতি নিজেই পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করে থাকেন।”
আবেদনে বলা হয়, “স্বাধীন, সাংবিধানিক সংস্থা বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতি পদটি সম্পূর্ণ নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ। তা ছাড়া তিনি (প্রধান বিচারপতি) সংবিধানের অভিভাবক। সুতরাং রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়ানোর জন্য প্রধান বিচারপতি পদটিই সবচেয়ে ভালো পদ।”
নিয়ম বদলের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আবেদনে বলা হয়, “সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন হওয়া সত্ত্বেও চতুর্থ সংশোধনী এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধানটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রপতির পদের ক্ষমতা, মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করা এবং রাষ্ট্রপতির ওপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা।
“সংবিদানের চতুর্থ সংশোধনীর আগে প্রধান বিচারপতিকে শপথ পাঠ করাতেন রাষ্ট্রপতি আর রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাতেন প্রধান বিচারপতি। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির শপথ পাঠ করানোর বিধানে পরিবর্তন আনা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার।
“পরে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধান বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাবেন স্পিকার, সেই বিধান ফিরিয়ে আনা হয়। যেহেতু সম্প্রতি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কিছু অংশ বাতিল করা হয়েছে, তাই রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করানোর বিদ্যমান বিধানটিও বাতিল করা হোক।”
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে বলে অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক জানিয়েছেন।