”কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন,” বলেন তিনি।
Published : 25 Aug 2024, 10:14 PM
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র-জনতার নতুন বাংলাদেশ গড়তে এসব কাজ শেষ করতে সময় চেয়েছেন।
প্রয়োজনীয় কাজ শেষে এ সরকারের দায়িত্ব হস্তান্তর ও নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি সবার আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলেছেন। নির্বাচনের বিষয়টিকে ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক’ সিদ্ধান্ত হিসেবে তুলে ধরে তিনি দেশবাসীকে তা ঠিক করার কথা বলেছেন।
দায়িত্ব নেওয়ার ১৭ দিনের মাথায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া দ্বিতীয় ভাষণে তিনি বলেন, “একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন।
”আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহবানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করবো। আমাদের উপদেষ্ঠামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।”
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে ২৬ মিনিটের ভাষণে মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো এবং আগামী দিনের পরিকল্পনার পাশাপাশি অগ্রাধিকারগুলোও জানিয়েছেন। ছাত্র-জনতার বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি পূরণে তার সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইউনূস বলেন, ”কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।
”আমরা ছাত্রদের আহবানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাবো যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব। আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।”
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ৮ অগাস্ট শপথ নেয় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
শুরু থেকেই রাষ্ট্র মেরামতে অন্তর্বর্তী সরকারের জোরালো অবস্থানের কথা জানিয়ে আসছে নতুন সরকার। এদিন প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণেও এটি পুর্নব্যক্ত করেন।
তিব বলেন, “আমরা বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাবো, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিক নির্দেশনা পেতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে। এই দিক নির্দেশনা না-পেলে আমরা দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারছি না।
”আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমরা আমাদের পক্ষ থেকে মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো প্রশ্ন তুলব না।”
বৈষম্যহীন ও শোষণহীন রাষ্ট্র গড়তে ছাত্র-জনতার স্বপ্ন পূরণ করাই তার সরকারের লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমি তাদের সেই স্বপ্নপূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন অনেকেই। সেই দিকে দৃষ্টি দিয়ে তিনি বলেন, “একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালইয়ে, আমার অফিসের আশেপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ- কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সকল পথ বন্ধ হয়ে থাকবে।
”আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিত ভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগত ভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব। কিন্তু আমাদেরকে ঘেরাও করে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না। সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এসময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।“
আগের সরকারের অপশাসন ও দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে আগের ’ফ্যাসিবাদের’ যুগ শেষে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, ”গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারপ্রধান দেশত্যাগ করার পর আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটিই। উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।“
সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ভারতের উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢল ও বৃষ্টিতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের ১০ জেলার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সরকারের সামনে চ্যাল্ঞ্জে হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বন্যা দুর্গতদের জীবন দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, “ভবিষ্যতে সকল ধরনের বন্যা প্রতিরোধে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে যাতে যৌথভাবে নেওয়া যায়, সে আলোচনা শুরু করেছি।”
জাতির ক্রান্তি লগ্নে বিপ্লবী ছাত্র জনতার আহ্বানে গুরু দায়িত্ব নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি নতুন এক বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ চান।
ইউনূস বলেন, “লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং লক্ষ লক্ষ মা বোনের আত্মদানের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছিলাম, তা ফ্যাসিবাদ এবং স্বৈরাচারের হাতে ধ্বংস হয়ে গেছে। আপনারা দেখেছেন আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তারা কীভাবে শেষ করেছে। দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে দুর্নীতি। এমন এক দেশে আমাদের দেশ রূপান্তরিত হয়েছে যেখানে স্বৈরাচারের পিওনও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ করার মতো অকল্পনীয় কাজ করে গেছে নির্বিবাদে।
”শিক্ষা খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে, ব্যাংকিং ও শেয়ারবাজার খাতে লুটপাট, প্রকল্প ব্যয়ে বিশ্ব রেকর্ড, অবাধ সম্পদ পাচার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে নিজ দলের পুতুলে রূপান্তর, বাক স্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার হরণ এসবই হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র।”
আগের সরকার জনগণকে নির্যাতন ও বঞ্চনা ও বৈষম্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “নতুন প্রজন্মের মানুষসহ কোটি কোটি মানুষের ভোটাধিকারকে বছরের পর বছর হরণ করেছে। মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে স্বৈরাচার তার নিজের, পরিবারের ও দলের কিছু মানুষের হাতে দেশের মালিকানা তুলে নিয়েছে।“
দীর্ঘদিনের ‘গণতন্ত্রহীনতা’ দূর করে জনগণকেই সব ক্ষমতার উৎসে নিয়ে যেতে চান অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
এ সরকারের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ”রাতারাতি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কঠিন। নড়বড়ে এক কাঠামো, আমি বরং বলবো জনস্বার্থের বিপরীতমুখী এক কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আমাদেরকে দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে।
”আমরা এখান থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এ দেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সকল ক্ষমতার উৎস হয়। বিশ্ব দরবারে একটি মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সমাদৃত হয়।”
বর্তমান সরকারের কাজের অগ্রাধিকারের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-অগাস্টের গণ-অভ্যুথানে বল প্রয়োগ ও হতাহতের ঘটনায় তদন্ত করার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে বাংলাদেশে এসে তাদের তদন্ত শুরু করতে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তদন্তের এই প্রক্রিয়া এ সপ্তাহেই শুরু হবে। তাদের প্রথম দল ইতোমধ্যে এসে গেছে।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দায়ের করা ’মিথ্যা ও হয়রানীমূলক’ মামলা প্রত্যাহার করার কথা তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গণ-অভ্যুথানে সকল শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সকল আহত শিক্ষার্থী ও জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী ২ জন উপদেষ্টার সহায়তায় একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।”
এই কার্যক্রমের জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার দ্রুত ’জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করবে বলেও বক্তৃতায় বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
আগের সরকারের সময় প্রশাসনে চরম দলীয়করণ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ”বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আরম্ভ করেছি। তবে প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে এবং একই সাথে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সময় প্রয়োজন।“
আর্থিক খাতেও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “লুটপাট ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এই খাতে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
”ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে। আর্থিক খাতে সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করা হবে যা দ্রুত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। শেয়ারবাজার, পরিবহন খাতসহ যেসব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করার কার্যক্রমে সরকারের দুই সপ্তাহের মধ্যেই হাত দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ এবং আয়না ঘরের মত চরম ঘৃণ্য সকল অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
”এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার নিশ্চিত করা হবে। তালিকা প্রস্তুত করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের বিচার করা হবে।”
আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জনমুখী ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে আর কোনো দিন কেউ যেন কোন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তথ্যের অবাধপ্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। তিনি বলেন, “জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তথ্যের প্রবাহে বিদ্যমান আইনি ও অন্যান্য বাধা অপসারণ করা হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করে এমন সব আইনের নিপীড়নমূলক ধারা সংশোধন করা হবে। ইতিমধ্যে এধরনের আইনগুলো চিহ্নিত করে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।”
বিদেশি সংবাদ কর্মীদের এদেশে আসার উপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি সাংবাদিকদের দ্রুত ভিসা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীরা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চালিয়ে যাবেন।“
শিক্ষাক্ষেত্রে ‘চরম নৈরাজ্যের’ অবসানেও তার সরকারে কাজ করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের উদ্যোগ নেব। এটা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার।
”একই সাথে পাঠ্যক্রমকেও যুগোপযোগী করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের আগামী দিনের কাজের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হবে এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা হবে।
ধৈর্য ধরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
'গুম-খুন-নির্যাতনে' যুক্ত সরকারি বাহিনীর সদস্যদের বিচার হবে
”ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা খাত এবং তথ্য প্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জোরালো অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সকল উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে এটি সকল সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করা হবে।”
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করার কথাও বলেন তিনি।
তিনি বলেছেন, “গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি সাক্ষর, প্রকল্পের নামে লুটপাট ইত্যাদি তথ্য নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
কৃষি খাত ও কৃষক এবং প্রবাসে থাকা জনশক্তির জন্যও কল্যাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন তিনি। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি বন্ধ করে প্রয়োজনীয় সংস্কার, জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়ন ও স্বাস্থ্য সেবা সব অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া এবং গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির পক্ষরাষ্ট্র হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানেও কাজ করবে তার সরকার।