‘‘আজকে এই সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন কিন্তু শিক্ষা বিষয়ক কোনো সংস্কার কমিশন হয় নাই। যেটা আপনার আগে প্রয়োজন ছিল,” বলেন তিনি।
Published : 21 Jan 2025, 07:10 PM
দেশের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা, মান ও পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘উন্মাদনা’ চলছে শিক্ষার ক্ষেত্রে, পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা করা হচ্ছে না।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে ‘গ্রন্থ আড্ডা’র অনুষ্ঠানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট কালকে বেরিয়েছে। এতগুলো ছেলে-মেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তার মধ্যে মনে হয় সাড়ে পাঁচ হাজার ভর্তির সুযোগ পেয়েছে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজগুলোতে। বাকিরা কী করবে?
”সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, হাইস্কুলে লটারি করে ভর্তি হয়। আমি একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল সেখানে লটারি করে ঠাকুরগাঁওয়ের ছেলেরা পরীক্ষা দিয়েছে। ক্লাস থ্রিতে যে ছেলেটা ভর্তি হবে তাকে যেতে হচ্ছে গাইবান্ধা স্কুলে।”
এমন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ”কী লাভ এটাতে, কী তৈরি হচ্ছে আমি কিচ্ছু বুঝতে পারি না। এই যে একটা আমি বলব যে, উন্মাদনা চলছে শিক্ষার ক্ষেত্রে। এটার ব্যাপারে কেউ দৃষ্টিও দিচ্ছে না, কথাও বলছে না, বিষয়গুলো পরিবর্তন করার জন্য কোনো চেষ্টা করা হচ্ছে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অনেক সমস্যা তার মধ্যে লেখাপড়াটা একেবারে শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা এটা একদম শেষ। এটার মধ্যে কিছু অবশিষ্ট আছে বলে আমার মনে হয় না। আপনি প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করেন একেবারে ইউনির্ভাসিটি, সব জায়গায় দেখবেন যে এত নিচু চলে গেছে তার মান তা বলে বোঝানো না।
উদাহরণ টেনে সাবেক শিক্ষক ফখরুল বলেন, “একেবারে কুড়িগ্রামের রৌমারী চরের সেই প্রাইমারি স্কুলে সেখানে কী শিক্ষা পাচ্ছে, কী সুবিধা পাচ্ছে সেটা কিন্তু আমরা একেবারেই জানি না। অসংখ্য স্কুল তৈরি হয়েছে বিভিন্ন এমপিওভুক্তি করে, অনেক কলেজ তৈরি হয়েছে উইথ অনার্স অ্যান্ড মাস্টার্স যেখানে আপনার কোনো শিক্ষক নেই সেখানেও অনার্স খুলে বসে আছে।
“দিনাজপুর গর্ভমেন্ট কলেজে কিছুদিন আগে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আমার চাকুরি জীবনের শুরুতে আমি দিনাজপুর গর্ভমেন্ট কলেজে অধ্যাপনা করেছিলাম সেখানে একটা ডিপার্টমেন্ট আছে অ্যাকাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট যেখানে
একজন শিক্ষক, অনার্স আছে, মাস্টার্সও আছে।
”এখন আপনারা বলুন এই বিভাগগুলোর কিংবা এই কলেজগুলো কী প্রয়োজন আছে সবাই আর্টস পড়ে বিএ-আটর্স, কর্মাস খুব কম ছাত্র পড়ে, সাইন্স পড়ে না প্রায়। তাহলে এই যে, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিএন পাস করাচ্ছেন এদেরকে দিয়ে কী আপনি করাবেন, সমাজে তার প্রয়োজন কি, কোনো প্রয়োজন নাই। যার ফলে সমাজে দেখা যায়, বৃদ্ধ মা তার ছেলেটাকে পড়ালেখার জন্য তার শেষ জমিটুকু বিক্রি করে ছেলেকে ঢাকায় পাঠায়। সেই ছেলে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি নিয়ে দেখা যায় সে কোনো চাকুরি পায় না। তাহলে সারাদেশে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার এটা বড় সমস্যা এটা নিয়ে কেউ চিন্তা করছি না।”
‘শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার হওয়া দরকার’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে এই সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন কিন্তু শিক্ষা বিষয়ক কোনো সংস্কার কমিশন হয় নাই। যেটা আপনার আগে প্রয়োজন ছিল, যেটা আগে দরকার ছিল বলে আমি মনে করি। গোটা সমস্যার মূলে ওই জায়গাটা।
‘‘আমার যদি শিক্ষাটা ঠিক না হয়, পরিকল্পনা যদি আমার না থাকে তা হলে আমি কি দিতে পারব বা সমাজে কি পরিবর্তন আমি আনতে পারব, আমি নিজে পরিবারের জন্য কি পরিবর্তন আনতে পারব। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে হাই স্কুলে লটারি করে ভর্তি হয়।”
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সাবেক ছাত্রনেতা আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, পলিসি গবেষক মাহাদী আমিন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষানুরাগী আফরোজা খানম রীতা, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়িদ আবদুল্লাহ, জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের জহির দিপ্তী, মঞ্জুর এলাহী, কাজী জহিরুল ইসলাম বুলবুল, হাসান আল আরিফ বক্তব্য রাখেন।