বাংলাদেশিদের নিয়ে এমন বক্তব্যের জন্য নিজ দল লেবার পার্টিতেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েন তিনি।
Published : 04 Jul 2024, 09:08 PM
বাংলাদেশি ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের নিয়ে অযাচিত মন্তব্যের জন্য যুক্তরাজ্য লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার এবং আরেক নেতা জনাথান অ্যাশওয়ার্থকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছে দুই সংগঠন।
বৃহস্পতিবার ‘বাঙালিত্ব গবেষণা উদ্যোগ’ (বিআরআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায়।
বাঙালি জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক অবদানের বিষয় তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা স্যার কিয়ার স্টারমার এবং জোনাথন অ্যাশওয়ার্থকে তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে এবং আন্তরিক ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে আহ্বান জানাচ্ছি।”
নির্বাচনি ডামাডোলের মধ্যে গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে ‘ডেইলি সান’ পত্রিকা আয়োজিত নির্বাচনি বিতর্ক অনুষ্ঠানে অবৈধ অভিবাসী মোকাবেলার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে লেবার পার্টির নেতা স্টারমার বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে তার সরকার অভিবাসীরা যেখান থেকে এসেছে, সে দেশেই তাদেরকে ফেরত পাঠাবে। আর এ সময়ই তিনি বাংলাদেশের উদাহরণ দেন।
একটি ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, “এ মুহূর্তে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আসা মানুষজনকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। কারণ বর্তমান সরকার তেমন কোনও ব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারেনি।
“অভিবাসীরা যেখান থেকে এসেছে সেখানে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার সংখ্যা ৪৪ শতাংশ কমে গেছে। সুতরাং লেবার সরকারের প্রথম কয়েক দিনে আমি কি করব তা বলছি, আমি তাদেরকে (অভিবাসী) ফিরতি বিমানে তুলে দেব।”
যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনে বৃহস্পতিবার নেতা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। বিভিন্ন জরিপের তথ্যে ভোটে স্টারমারের দল লেবার পার্টির জয়ের সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে।
এ নির্বাচনের ঠিক আগে বাংলাদেশিদের নিয়ে এমন বক্তব্যের জন্য নিজ দল লেবার পার্টিতেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছেন কিয়ার স্টারমার। তার কড়া সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত লেবার এমপি’রা। পদত্যাগও করেছেন দলের এক কাউন্সিলর। বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকেও তার তুমুল সমালোচনা হচ্ছে।
প্রতিবাদের মুখে ওই বক্তব্য নিয়ে সুর পাল্টে স্টারমার বলেছেন, কাউকে আক্রমণ করে কথা বলা বা মর্মাহত করার কোনও অভিপ্রায় তার ছিল না।
বিবিসি রেডিও ৫ লাইভ অনুষ্ঠানে ফোনকলে একজনের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় স্টারমার তার মন্তব্যের ওই ব্যাখ্যা দেন বলে জানিয়েছে ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ পত্রিকা। কিয়ার স্টারমার এও স্বীকার করেছেন যে, তিনি একজন ‘আনাড়ির’ মতোই কথা বলেছিলেন।
বিআরআই ও আইসিএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের গুরুতর উদ্বেগ এই যে স্টারমার এবং অ্যাশওয়ার্থের এই ধরনের তাচ্ছিল্যসূচক বক্তব্যের ফলে, দীর্ঘদিন যাবৎ প্রান্তিকিকৃত একটি জনসমাজের প্রতি আরও বৈষম্যমূলক এবং সহিংস আক্রমণ নেমে আসতে পারে যদি না তা সমালোচিত এবং সংশোধিত হয়।
“একই রাজনৈতিক দলের দু’জন শীর্ষ নেতা যখন একই নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, একইধরণের জাতিবাদী সরলিকরণ পুনরাবৃত্তি করে এবং উভয়ই তাদের মন্তব্যের প্রেক্ষিত কোনও সুস্পষ্ট ক্ষমাপ্রার্থনা এবং তা প্রত্যাহারের আন্তরিক প্রচেষ্টা এড়িয়ে যায়, তখন তা লেবার পার্টির বর্তমান নেতৃত্বের একটি অংশের মধ্যে গড়ে ওঠা 'বাঙালিবিদ্বেষ' এর সূচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “তা যদি নাও হয়, অন্ততপক্ষে, এটি কাকতালীয় একটি সাঙ্ঘাতিক রাজনৈতিক ভুল তো বটেই। মারাত্মক এই ভুলের প্রশমনকল্পে এবং তার প্রায়শ্চিত্তকরণে দলের সদিচ্ছা স্পষ্ট করতে হলে, লেবারকে অনতিবিলম্বে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক অতীতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের উপায় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে।
“তা না করে, কমিউনিটি টিভি চ্যানেলে হাজির হয়ে ‘লেবার এবং বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সম্পর্কের’ ক্লিশে উদ্ধৃতির পুনরাবৃত্তি করে যে ‘উদ্বেগ’ স্যার কিয়ার ব্যক্ত করেছেন, তা কেবলমাত্র ঠুনকো ‘কথার কথা’ হিসেবেই বিবেচিত হবে।”
ব্রিটিশ সমাজে বাঙালি জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদান এবং তাদের অধিকার এবং মর্যাদারক্ষার জোরালো দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়, “শতাব্দীব্যাপী নিপীড়ন, ব্যাপকবিস্তৃত অমানবিকীকরণ এবং একাধিক গণহত্যার শিকার জনগোষ্ঠী হিসেবে, আমরা কেবল যুক্তরাজ্যের বাঙালিদের সাথেই নয়, বরং যে কোনও প্রান্তিকিকৃত সম্প্রদায়ের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি যারা যেকোনো স্থানে, যে কারো দ্বারা জাতিবাদী সরলিকরণের মুখোমুখী হচ্ছে; সেইসাথে ন্যায়বিচার ও সমতার পক্ষে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা জারি রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।”
বাংলাদেশিদের নিয়ে মন্তব্য: সুর পাল্টালেন লেবার নেতা স্টারমার
বাংলাদেশিদের নিয়ে স্টারমারের মন্তব্যের 'অপব্যাখ্যা' হচ্ছে, দাবি