“চিড়িয়াখানায় আগে বিভিন্ন উৎসব ও বিশেষ ছুটির দিনে হাতির খেলা দেখানো হলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে এবার সেটি থাকছে না,” বলেন পরিচালক।
Published : 30 Mar 2025, 01:30 PM
রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ, গাছের গোড়া করা হয়েছে রঙ, বিভিন্ন স্থানে বসেছে দিকনির্দেশক ও সতর্কতামূলক নতুন সাইনবোর্ড।
এবারের রোজার ঈদ ঘিরে দর্শনার্থীদের জন্য পরিপাটি করে তোলা হচ্ছে চিড়িয়াখানা। প্রতিবছর ঈদ ঘিরে এই প্রস্তুতি নেওয়া হলেও এবার লম্বা ছুটির কারণে বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখছেন তারা।
শুক্রবার জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিড়িয়াখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। দর্শনার্থীদের জন্য আমাদের প্রাণীগুলো যেন সুস্থ-সবল থাকে, সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।”
চিড়িয়াখানা এলাকা ও ভেতরে নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় ও চিঠি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
কোভিড মহামারীর সময়ে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী সমাগম ছিল কম। সেসময় ফুটবল খেলায় পারদর্শী করে তোলা হয় হাতিকে। পরে বিভিন্ন উৎসব ও বিশেষ ছুটির দিনে হাতির খেলা দেখানো হয়। খেলা দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়ও জমে যেত। যদিও এবার সেটি থাকছে না।
কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলছে, গত রোজার ঈদে ফুটবল খেলা দেখানোর সময় হাতির শুঁড়ের আছারে এক কিশোরের প্রাণ যায়। সে ছিল মাহুতেরই ছেলে।
পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনাটি আমাদের হাতির মাহুতদের মনোবলে প্রভাব ফেলেছে। সেই কারণে ওই ঝুঁকি আর রাখছি না। কোনো প্রাণীর খেলা আয়োজন করব না।”
চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোনো দুষ্কৃতকারী যেন কোনোরকমের সুযোগ নিতে না পারে। সেজন্য তারাও (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) কথা দিয়েছে, এক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা দেবে।”
ঈদের ছুটিতে দিনে প্রায় এক থেকে আড়াই লাখ দর্শনার্থীর ভিড় হয় মিরপুর চিড়িয়াখানায়। ফলে মিরপুর-১ নম্বর থেকে চিড়িয়াখানা পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। এবারও এমন দর্শক সমাগমের প্রত্যাশা করছে কর্তৃপক্ষ। ফলে যানজট মোকাবেলায়ও উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন তারা।
চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, “তখন অনেক বেশি জ্যাম হয়ে যায়, মানুষের অনেক ভোগান্তি হয়। চিড়িয়াখানা রোডে যেন যানজট তৈরি হতে না পারে এ ক্ষেত্রে আমাদের পার্কিংয়ের ইজারাদারসহ ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। এখানে আমাদেরও ফোর্স থাকবে সবসময়।”
চিড়িয়াখানার মূল ফটকের সামনেও দর্শনার্থীদের বড় জটলা তৈরি হয়। সেখানে বিশৃঙ্খলা এড়াতে লম্বা লাইনের ব্যবস্থা করার কথা বলেন তিনি।
“আর চিড়িয়াখানার ভেতরে আমাদের পর্যাপ্ত নিরপত্তাকর্মী থাকবে, সঙ্গে আনসার, ট্যুরিস্ট পুলিশ আর ডিএমপি কাজ করবে। সেইসঙ্গে র্যাবের টহল অব্যাহত থাকবে।”
এবার চিড়িয়াখানায় জেব্রার তিনটি বাচ্চা হয়েছে, যার একটির বয়স দুই মাস, একটির ছয় মাস, আরেকটির আট মাস। আর ১১ মাস বয়সের দুটি বাঘের বাচ্চাও রয়েছে। এই শাবকগুলোকেই এবার ঈদের বড় চমক বলছেন পরিচালক রফিকুল ইসলাম।
“এগুলোকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। চিড়িয়াখানার বিনোদন মূলত প্রাণীদের উপস্থাপন করা।”
প্রতিদিন চিড়িয়াখানা খোলা থাকবে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ৫০ টাকার টিকেট কেটে সেখানে দিনভর সময় কাটাতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
সাধারণ দিনগুলোতে রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে, ঈদের সপ্তাহেও রোববার চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার পরিচালক।