আরও ৮ জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগের দিন ৫৬টি জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহের তথ্য দেওয়া হয়েছিল।
Published : 21 Sep 2024, 12:29 AM
বৃষ্টির স্বস্তি শেষে ফিরেছে দাবদাহ, যা বয়ে যাচ্ছে সারা দেশেই; অন্তত তিন দিনের আগে তা কমার সম্ভাবনাও দেখছে না আবহওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার সন্ধ্যার বুলেটিনে নতুন করে আরও ৮ জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগের দিন ৫৬টি জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহের তথ্য দেওয়া হয়েছিল।
রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ফের তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ; ভ্যাপসা গরমে হাসফাঁস অবস্থা। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে বলে খবর রয়েছে।
শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
শুক্রবার সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, যা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনার কথা বলেছেন আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবীর।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাপমাত্রা এ রকমই থাকবে; তবে ২৩ অগাস্ট (সোমবার) থেকে কমার সম্ভাবনা আছে। একটু বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে, তখন তাপমাত্রা কমে আসতে পারে।”
ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে
গত এক সপ্তাহে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে তথ্য দিয়েছে তাদের কর্তৃপক্ষ।
তবে ঢাকায় উদরাময় গবেষণার আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে শিশুদের চেয়ে বয়স্করা বেশি আসছেন বলে অবহিত করেছেন তারা।
হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে আমরা প্রতি দিন পাঁচশ রোগী পেতাম। গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়তে বাড়তে সাতশ ছুঁয়ে ফেলেছে।”
শুক্রবার হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালের বাইরেও সামিয়ানা টাঙিয়ে বেড তৈরি করা হয়েছে।
অনবরত পাতলা পায়খানা আর বমি চলতে থাকায় ৫ বছর বয়সী ওমার আল ফারুককে বৃহস্পতিবার সকালে মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে নিয়ে আসে তার পরিবার।
ওমারের মা নাজিয়া আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, বুধবার রাতের খাবার শেষে ঘুমানোর পর মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে ওমার বমি করতে থাকে। এরপর অনবরত বমি আর পাতলা পায়খানা চলতে থাকায় তারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
“সাথে পেট ব্যথাও আছে। স্যালাইন দেওয়ার পর বমি কমলেও এখন পর্যন্ত কোনো উন্নতি দেখছি না। কিচ্ছু খেতে চাচ্ছে না, বাথরুম (পাতলা পায়খানা) চলছেই। কিছু খাওয়ালেই বমি করে দেয়, স্যালাইন খুললেও বমি করে। ডাক্তার বলেছেন, পানিশূন্যতা হইছে; এটি দূর হলে না কি বমি দূর হয়ে যাবে।
“মনে হয় গরমের কারণে অসুস্থ হইছে। কারণ অতিরিক্ত গরম পড়ছে। বাইরেও তো কিছু খাওয়াই না।”
হাসপাতালের বেডে অচেতন হয়ে শুয়ে আছেন সাজেদা বেগম। অসুস্থতার কারণে শুক্রবার সকালে তাকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
সাজেদার ছেলের বউ আঁখি আক্তার বলেন, “কালকে সন্ধ্যায় সুস্থ্যই ছিল। হঠাৎ রাত থেকে বমি, পাতলা পায়খানা শুরু হয়। খাবার-দাবার তো নরমালই খাইছে। গরমের কারণে অনেক অস্থির ছিল। এই গরমে ১২ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না এলাকায়।”
মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে এসেছেন সামসুন্নাহার। তার মেয়ে সানজিদা আক্তার বলেন, “অনেক বেশি পাতলা পায়খানা আর বমি করতেছে। রাত থেকেই অসুস্থ ছিল, পরে সকালে ভর্তি করানো হয়।”
বমি আর পাতলা পায়খানা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে নতুন বাজার এলাকার আফসানা জান্নাত।
তার মা মাকসুদা আক্তার বলেন, রাতে ভালো ছিল। সকালে উঠেই রাথরুমে যাওয়া শুরু করছে। এরপর বমি শুরু হয়ে গেল। গরম থেকে হইছে মনে হয়। রুটি, জুস ছাড়া তো বাইরে তেমন কিছু খায়নি।
“আগের চেয়ে একটু কমছে, তাও চলতেছে। ভারি খাবার খাইতেই চায় না। ডাবের পানি, স্যালাইন খায় খালি।”
ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে ডাক্তার বাহারুলের পরামর্শ, “ফুটিয়ে পানি খেতে হবে; বাচ্চাদের খাওয়ানোর আগে মায়েরা হাতটা সাবান দিয়ে ধুয়ে খাওয়াবেন। আর অনিরাপদ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
“অসুস্থ হলে বাসাতেই নিয়ম মেনে খাবার স্যালাইন দিতে হবে আগে।”