“আমি জানি না, আমরা যাদের সঙ্গে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করব, তারা বিষয়গুলো কীভাবে দেখে আমাদের সঙ্গে কাজ করবে।”
Published : 25 Jul 2024, 09:47 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ‘বার্তা’ গেছে, তা নিয়ে শঙ্কিত নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
এক সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, সেখান থেকে উত্তরণের পথও জানা নেই মন্ত্রিপরিষদের এই সদস্যের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখন যে সংকটটা হল, পৃথিবীর দেশে দেশে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থার উপর যে মেসেজটা গেল, এটা আমাদের জন্য ভালো না।”
অর্থনীতির ক্ষতি নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের পোশাক শিল্পসহ অন্য যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, সে শিল্প প্রতিষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা স্লো হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট একটা ধাক্কা। আমি জানি না, এই ধাক্কা কীভাবে কাটিয়ে উঠবে।”
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে গত ১৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকা বিক্ষোভে চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ছাত্রলীগ কর্মীসহ দুইজন এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
এর প্রতিবাদে ১৮ জুলাই ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে হয় তুলকালাম। ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের সময় গুলিতে বেশ কয়েকজন ছাত্রের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয়।
বিটিভি ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, সেতু ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারি স্থাপনার আগুন ধরিয়ে দেওয়া, ফায়ার সার্ভিসকে বাধা দানের মতো ঘটনা ঘটে। পরে হামলা হয় মেট্রোরেলে, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় দুটি স্টেশন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ও প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সংযোগ, জারি হয় কারফিউ। এর মধ্যেও ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুরে সংঘাত চলতে থাকে।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় পুলিশের থানা ও ফাঁড়ি এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়, নরসিংদী কারাগারের ফটক ভেঙে সব বন্দিকে বের করে লুট করা হয় অস্ত্র ও গুলি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই এক সপ্তাহের সংঘাত সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়ে গেছে।
সোমবার থেকে সংঘাত থামতে থাকে, তবে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে বুধবার, এখনও বন্ধ ট্রেন চলাচল। ইন্টারনেট ফিরলেও এর গতি সীমিত, আবার মোবাইল ইন্টারনেটও বন্ধ।
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যে ঘটনা ঘটেছে, এর কারণে আমরা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহন করতে পারি নাই। ডিজিটাল সার্ভার স্টেশন ডাটা সেন্টার পুড়িয়ে দেয়ার কারণে আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কাস্টমস তাদের কার্যক্রম করতে পারে নাই বলেই চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে।
“অনেক কষ্টের পরে ম্যানুয়ালি কিছু কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তাতে করে প্রতিদিন যেখানে সাড়ে আট হাজার-নয় হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে জাহাজ থেকে। সেটা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব ছিল না। এ কারণে আমাদের সার্বিক অর্থনীতিতে বিরাট একটা ক্ষতি হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের মত বিনিময়ের কথা তুলে ধরে খালিদ বলেন, “ব্যবসায়ীরা সাহসিকতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন তারা এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম, তাদের সেই সক্ষমতা আছে। ব্যবসায়ীদের আমি ধন্যবাদ জানাই, তাদের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। কারণ, তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এতটা গতিশীল ও বিস্তৃত হয়েছে।
“প্রধানমন্ত্রী সেই সাহসটা দিচ্ছেন এবং দিয়ে যাবেন। কাজেই আমার ধারণা, যে ক্ষতিটা করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার চেষ্টা হয়েছিল মনে হয় সেই ষড়যন্ত্র সফল হবে না।”
বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল থাকবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্য থেকে কেউ টেনে ধরতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন নৌ প্রতিমন্ত্রী।
চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ধাক্কা খেল কি না
এই প্রশ্নে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্লেষণ করবে। প্রকল্প বরাদ্দে যদি কিছু কাটছাঁট করতে হয়, হতেও পারে। কারণ আমরা তো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে, করোনা মহামারীর কারণে কিছু প্রকল্প সংকুচিত করেছি।
“এখন যে ভয়াবহতা এই জামায়াত-বিএনপি গোষ্ঠী করেছে, এতে কী পরিমাণ ক্ষতি তা দুদিনের মধ্যে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। যেভাবে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা দরকার সেভাবে করব।”
২০২৪-২৫ সালের মধ্যে বে টার্মিনালের করার ঘোষণার বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু পারি নাই তো। কারণ, করোনায় তিন বছর ব্লকড ছিলাম, বিদেশি বিনিয়োগ থেমে গিয়েছিল, এখন আমরা সচল হয়েছি।
“এখন যে সংকটটা হল, পৃথিবীর দেশে দেশে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থার উপর যে মেসেজটা গেল এটা আমাদের জন্য ভালো না। আমি জানি না, আমরা যাদের সঙ্গে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করব, তারা বিষয়গুলো কীভাবে দেখে আমাদের সঙ্গে কাজ করবে। এটা পরবর্তীতে আলোচনা না করে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।”
বন্দরে কনটেইনার জটের সমাধান কবে?
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “রেল পথ বন্ধ হয়ে গেছে, নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্রিজ কালভার্ট ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এবং অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে।
“এরকম পরিস্থিতিতে আমরা আলোচনা করছি। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ হওয়ার কারণে কমলাপুর যে আইসিডি আছে সেটা অনেক সংকুচিত হয়ে গেছে। সেখানেও কিছু সংকট আছে। পাশাপাশি কিছু জটিলতার কারণে পানগাঁও কিছুটা স্থবির অবস্থা তৈরি হয়েছিল। করোনার সময়েও কনটেইনার জট হয়েছিল। আমরা অফডকগুলোর সহায়তা নিয়েছিলাম সে সময়। কাস্টমস-এনবিআর আমাদের সাপোর্ট দিয়েছিল। আমরা সম্মিলিতভাবে সেটা কাটিয়ে উঠেছি। সম্মিলিতভাবে আলোচনা করছি এগুলো কাটিয়ে উঠার জন্য।”
সময় মত ডেলিভারি নিতে না পারায় আমদানি-রপ্তানি পণ্যে ডেমারেজ চার্জ আরোপ করা হবে কি না- এই প্রশ্নে খালিদ বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার উপরে ওয়েবার দিয়েছিল করোনার সময়। আমাদের কাছে ব্যবসায়ীরা সেভাবে যদি উপস্থাপন করে, সেটা চট্টগ্রাম বন্দর নিশ্চিতভাবে বিবেচনা করবে।
“অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বন্দর পরিচালিত হবে না। অর্থনীতির সেবার জন্য এই বন্দর কাজে লাগবে। যদি সঠিক তথ্য প্রমাণ নিয়ে আমাদের কাছে উপস্থাপন হয়, তার পাশে আমরা সব সময় দাঁড়াব।”