“বই সংশোধন এবং পরিমার্জনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে,” বলেন তিনি।
Published : 11 Sep 2024, 09:52 PM
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ‘ত্রুটিপূর্ণ’ যে শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু করেছিল, তার পরিবর্তন করা হয়েছে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার অব্যাহত থাকবে।
দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মাথায় বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি পাঠ্যবইয়েও পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের ভাষ্য ছিল, পরীক্ষা ও মুখস্তনির্ভরতা থেকে শিক্ষার্থীদের বের করতে ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক’ এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করছে তারা। তবে ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন শুরু হওয়া এই শিক্ষাক্রমের পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা ছিল।
সরকারের পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকার তা বাতিল করে পুরনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার বার্তা দেয়। পরে সে অনুযায়ী সংস্কারের কাজ শুরু হয়।
ওই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বাধা হিসেবে শিক্ষকদের প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও নেতিবাচক ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যত যেন উজ্জ্বল হয়, সেটা নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আমাদের পূর্ণ নজর রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমানের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। বই সংশোধন এবং পরিমার্জনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাঠ্যক্রম সংশোধন ও পরিমার্জন করে ২০২৪ সাল থেকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং আগামী বছর থেকে পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আসবে।
মাধ্যমিকে ছয়টি করে বিষয়ভিত্তিক যে মূল্যায়ন কার্যক্রম অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে, সেগুলো আর হবে না বলেও জানানো হয়েছে। ২০২৬ সালের এসএসসি ও সমানের পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা অব্যাহত রাখা হবে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ‘সংস্কারের হাওয়ায়’ নতুন শিক্ষাক্রম গুটিয়ে নিয়ে পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৈরি করা এ শিক্ষাক্রম ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’, বলেছিলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চ প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
“বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ডে দখলদারত্বের রাজনীতি বন্ধ করার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রথম মাসে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য মহোদয় পদত্যাগ করেছেন।
“উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। প্রথম মাসে আমরা ক্রমাগতভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার কাজ শুরু করেছি। এর ফলে সকল সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।”
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আওয়ামী মতাদর্শী না হওয়ার কারণে ২৮ থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশকৃত অনেক প্রার্থী নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন।
“৮ অগাস্টের পরে ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক ভাবে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
সরকারি কর্মচারীদের প্রতিবছর বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশও দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেছেন, নতুন জনপ্রশাসন কাঠামোকে দাঁড় করানোই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মাসের ‘বড় অর্জন’।
“ধ্বংস হয়ে পড়া একটা জনপ্রশাসনকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি আমরা। মন্ত্রণালয়গুলোর উচ্চতম পদে যারা নিয়োজিত ছিলেন, তারা অনেকে দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেছেন কিংবা পদে থাকলেও সহকর্মীদের চাপের মুখে কাজ করতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন।
“আর যারা ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের আমলে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন কিংবা দায়িত্ববিহীন অবস্থায় একই পদে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের সবার কথা বিবেচনায় নিয়ে জনপ্রশাসনকে নতুন করে দাঁড় করানোই ছিল আমাদের কঠিনতম সময়।
“আবার সকল সমস্য সমাধান করে একটি নতুন জনপ্রশাসন কাঠামো দাঁড় করাতে পেরেছি এটাই আমাদের প্রথম মাসের সবচাইতে বড় অর্জন। আমার বিশ্বাস এই জনপ্রশাসন জনগণের ইচ্ছা পূরণে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারবে।”