জামিনে থাকা আদিলুর ও এলান রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
Published : 28 Jan 2024, 04:14 PM
দশ বছর আগে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর দায়ে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত বৃহস্পতিবার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় তাদের এই সাজার রায় দেন।
জামিনে থাকা আদিলুর ও এলান রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দুই বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে হাজত বাসকালীন সময় তাদের সাজা থেকে বাদ যাবে।
এই ট্রাইব্যুনালে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর মামলার বাদী ডিবির তৎকালীন উপপরিদর্শক (বর্তমানে সিআইডির পরিদর্শক) আশরাফুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে দুই আসামির বিচার শুরু হয়েছিল। গত ২৪ আগস্ট রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার প্রতিক্রিয়ায় মাঠে নেমেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত সারাদেশ থেকে সংগঠনের কর্মী ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ঢাকায় জড়ো করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল।
দিনভর সরকারের বারবার আহ্বানেও তারা ওই স্থান না ছাড়ায় রাতে সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে পরে অধিকার তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করে; যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।
অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ অগাস্ট এই ঘটনায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা আইনজীবী আদিলুরকে মামলা দায়েরের দিন ১০ অগাস্ট রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অধিকারের কার্যালয়েও চলে পুলিশের তল্লাশি। আদিলুর দুই মাস পর জামিনে মুক্তি পান। এলানও আদালতে আত্মসর্পণ করে জামিন নেন।
তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। পরদিন মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়, ২০১৪ সালে হয় অভিযোগ গঠন। তার সাত বছর পর ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচার শুরু হয়।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা’ চালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে ‘চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে’।
“পাশাপাশি তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর টেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়।”
বিচার চলাকালে আদালতে দেওয়া সাক্ষে মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল বলেছিলেন, “হেফাজতে ইসলামের ওই সমাবেশে পুলিশের উপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ মে সকালে পুলিশসহ ১১ জন মারা যান। অথচ অধিকারের ওয়েবসাইটে একই বছরের ১০ জুন ৬১ জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবদনে বিভিন্ন সময়ে নাশকতার পুরনো কিছু ছবিও যুক্ত করা হয়।
“এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে উসকানি এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১)(২) ধারার অপরাধের উপাদান পাওয়া যায়।”
আশরাফুল সাক্ষ্য দেওয়ার পর তাকে জেরা করেছিলেন আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভুঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম।
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)