সমতলের আদিবাসীদের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্র তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, বলেছেন সংগঠনের এক নেতা।
Published : 26 Jan 2025, 11:19 PM
আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে তাদের জন্য আলাদা পদ সংরক্ষণ করতে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব করেছে সমতল আদিবাসীদের একটি সংগঠন।
আর ওইসব এলাকার ভূমি, জলাশয়, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আদিবাসী বিষয়ক আলাদা স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
রোববার সকালে স্থানীয় সরকার কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরেছেন ‘সমতল আদিবাসী অধিকার আন্দোলন’ এর নেতারা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে (এনআইএলজি) এ সভার হয়েছে বলে সংগঠনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
রাতে সমতল আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের সদস্য সচিব রিপন বানাই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সভায় আমাদের প্রতিনিধিরা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মতামত ও লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেন।
আলাদা পদ সংরক্ষণের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে অন্যন্য জেলা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদের থেকে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোর পরিষদে ওই একটি পদ বেশি থাকবে। যে পদের জন্য শুধুমাত্র ওইসব এলাকার আদিবাসী মানুষ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। নির্বাচনের সময় আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ও আলোচনা করেছি।
স্থানীয় সরকার বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির মাধ্যমে কাজ করে তুলে ধরে রিপন বলেন, “যেসব এলাকায় আদিবাসীরা বসবাস করেন ওইসব জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে আদিবাসী বিষয়ক আলাদা আলাদা স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে কমিশনকে সুপারিশ জানিয়েছি।
“ওই স্ট্যান্ডিং কমিটি আদিবাসীদের জন্য ভূমি, জলাশয়, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা করবে।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১টি জাতিগোষ্ঠীর প্রথাগত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি রয়েছে। গারোদের নকমা প্রথা, হাজংদের গাওবুড়া, সাঁওতালদের মানঝি বা পরগানা ও পঞ্চায়েত প্রথার মত সমতলের আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতায়ন, স্বীকৃতি, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ এবং ভাতার ব্যবস্থা করতে কমিশনের কাছে প্রস্তাব তুলে ধরেছেন তারা।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য তুলে ধরে সমতল আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক উজ্জ্বল আজিম বলেন, এদেশে ৫০টির বেশি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ৪০ লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলে, যা মোট আদিবাসী জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও সমতলের আদিবাসীদের অধিকার এবং জীবনমান উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করেনি।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মত সমতলের আদিবাসীদের অধিকার এবং জীবনমান উন্নয়নের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন জরুরি বলে মন্তব্য করেন উজ্জ্বল।
ঐতিহাসিক কাল থেকে সমতলের আদিবাসীরা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি এই রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সভায় কমিশনের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্ব করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন-কমিশনের সদস্য আব্দুর রহমান, ইলিরা দেওয়ান ও মাশহুদা খাতুন শেফালী।
আর সমতলের আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের অন্য যারা উপস্থিতি ছিলেন তারা হলেন- সদস্য হেলানা তালাং, অলিক মৃ, টনি চিরান, আন্তনী রেমা, বিভূতি ভূষণ মাহাতো, অলি কুজুর, টুম্পা হাজং এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রাজকুমার শাও।