অবৈধ আয় ও সম্পদ গোপনের তথ্যে, দুই বছর আগে অবসরে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা।
Published : 04 Jul 2024, 08:41 PM
চট্টগ্রামে অবৈধ সম্পদ মামলায় দুই বছর আগে অবসরে যাওয়া এক জন পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এই দম্পতি যৌথ নামে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি চার তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। ছয় বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্তে নামার পর দাবি করা হয়, স্ত্রীর টিউশনি আর বুটিক ব্যবসার আয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে দুদক তদন্ত করে দেখেছে, সেই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর কোনো বুটিক ব্যবসা ছিল না। তারা মনে করছে, চাকরি করার সময় অবৈধ আয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ বৃহস্পতিবার ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা স্বামী-স্ত্রীর নামে আলাদা মামলা করেন।
আসামি মো. আবুল হাশেম সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে ২০২২ সালের অক্টোবরে অবসরে গেছেন। অবসরের আগে তিনি শিল্প পুলিশে কাজ করেছেন। তার স্ত্রীর নাম তাহরিনা বেগম।
দুজন মিলে প্রায় ৬২ লাখ টাকার তাদের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলেও দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে।
দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আতিকুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগে আবুল হাশেম ও তার স্ত্রীর সম্পদের বিষয়ে ২০১৮ সালে কাজ শুরু করেন তারা।
২০১৫ সালে তাহরিনা ও তার স্বামীর যৌথ নামে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সড়কের রূপসী হাউজিং এলাকায় যৌথ বিনিয়োগে চার তলা ভবন নির্মাণ হয়। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় আরও দুই বছর আগে।
দুদকের মামলায় বলা হয়, সে সময় বিনিয়োগ করার মত অর্থ তাহরিনার কাছে ছিল না।
এজাহারে লেখা হয়েছে, যৌথ নামে ভবন নির্মাণ করলেও তাতে তাহরিনার কোনো বিনিয়োগ ছিল না। আবুল হাশেম চাকরি করার সময় ‘অবৈধভাবে’ যে অর্থ উপার্জন করেছেন, তা দিয়েই এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ এসআই পদে পুলিশে নিয়োগ পান আবুল হাশেম। পরে পদোন্নতি পেয়ে তিনি সহকারী পুলিশ কমিশনার হন।
তাহরিনার বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে দুদক লিখেছে, তিনি তার আয়কর বিবরণীতে বাড়ি ভাড়া, ভাইদের কাছ থেকে উপহার বাবদ নগদ অর্থ, ব্যাংক সুদ, স্কুলে শিক্ষকতা ও টিউশনি ও বুটিক ব্যবসা থেকে আয়ের কথা উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু তাহরিনা বুটিক ব্যবসার ও টিউশনি থেকে আয়ের কথা উল্লেখ করলেও সেগুলোর বিষয়ে কোনো প্রমাণ জমা দেননি।
তদন্তে টিউশনি থেকে আয়ের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য ধরা হলেও তার বুটিক ব্যবসা নেই বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে সেখান থেকে তার আয়ের বিষয়টিও গ্রহণযোগ্য হয়নি।
সম্পদের তথ্যও গোপন
দুদকের কাছে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে আবুল হাশেম ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলের বিষয়টি গোপন করেছেন বলেও সিদ্ধান্তে এসেছে সংস্থাটি।
তাহরিনা বেগম ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকার সম্পদ অর্জন এবং জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৬ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলের তথ্য গোপন করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রকাশ পেয়েছে।