মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং, মোহাম্মদিয়া হাউজিং, চান মিয়া হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায় এই ডাকাতিরা আতঙ্ক ছড়ায় মঙ্গলবার রাতে।
Published : 07 Aug 2024, 02:57 PM
ডাকাতির আতঙ্কে নির্ঘুম এক রাত পার করেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরবাসী।
মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ওই এলাকায় ‘ডাকাতি হচ্ছে’ বলে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হলে স্থানীয়রা লাঠিসোঁটা হাতে দল বেঁধে রাস্তায় নেমে যান ডাকাতি ঠেকাতে।
মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং, মোহাম্মদিয়া হাউজিং, চান মিয়া হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায় এই ডাকাতির আতঙ্ক ছড়ায়।
এর মধ্যে নবোদয় হাউজিংয়ের একটি বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা ডাকাতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার একটি বাড়ির মালিক। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্থানীয়রা ১১ জনকে আটক করে তাদের হাতে তুলে দেয়।
স্থানীয়রা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তারা দেখেন দেশীয় অস্ত্র হাতে তরুণ কিশোরদের ছোট ছোট দল রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে। তারা বিভিন্ন বাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলতে বলছিল।
পুলিশবিহীন অরক্ষিত রাতে তরুণ-কিশোরদের ওই আনাগোনা মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়ায়। ‘ডাকাত পড়েছে’ বলে এলাকার মসজিদগুলোতে মাইকিং শুরু হয়। সেখানে বলা হয়, “কেউ ঘুমাবেন না, আপনারা সজাগ থাকুন।”
চানমিয়া হাউজিং এর বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ৩টার দিকে মসজিদ থেকে ডাকাত পড়েছে, ডাকাত পড়েছে বলে মাইকিং শুরু হয়। ভবনের লোকজন ব্যাপক আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই লাঠিসোঁটা হাতে নিচ তলার গ্যারেজে এসে দাঁড়ান। এক পর্যায়ে এলাকার তরুণ যুবকেরা রাস্তায় নেমে আসেন।”
ডাকাত আতঙ্কের মধ্যে সেনাবাহিনীর একাধিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মানুষ একটু স্বস্তি বোধ করে বলে জানান ঈসাম উদ্দিন নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী।
“অনেকেই রাস্তায় নেমে যান প্রতিরোধ করতে। এক পর্যায়ে জনতা একটি বালুর ট্রাকসহ ১১ জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে তুলে দেয়। তবে তারা নিজেদের শ্রমিক হিসেবে দাবি করছিল ওই সময়।”
মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ির একটি বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী ইমরান হোসেন জানান, একটি ট্রাক ও কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে কিছু তরুণ এলাকায় ঢুকে এদিক-ওদিক টহল দিচ্ছিল।
“ওই সময় শোনা যায়, নবোদয় হাউজিংয়ের একটি বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। মসজিদের মাইক থেকেও ডাকাত পড়েছে বলে মাইকিং করা হয়। পরে লোকজন রাস্তায় নেমে তাদের প্রতিরোধ করে। শুনেছি একটি ট্রাকসহ ১১ জনকে আটক করা হয়, মোটরসাইকেল নিয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়।”
নবোদয় হাউজিংয়ের ওই বাড়ির মালিক বলেছেন, শেষ রাতের দিকে স্থানীয় সিরাজের ছেলে আলমগীরসহ কয়েকজন "কাকা কাকা' ডাকতে ডাকতে তার বাড়ির মেইন গেইট ধাক্কাতে থাকে।
“দরজা খুলে বের হলে ওরা বলে, ‘কাকা ভয় পাবেন না, একটু কথা আছে, বের হয়ে আসেন।’
আমি দরজা খুললেই বিশাল এক রামদা গলায় ধরে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। কিছু মারধরও করে।”
এক পর্যায়ে ঘরে থাকা সৌদি রিয়ালসহ প্রায় দুই লাখ টাকা নিয়ে ছেলেরা চলে যায়। বাড়ির মালিক বলেন, “আলমগীর এলাকার মানুষদের খুব জ্বালাইতাছে।”
মোহাম্মদপুরের ডাকাতির আতঙ্কের কথা চাউর হয় ফেইসবুকেও। অনেকেই ‘ডাকাত আতঙ্কে’ তাদের নির্ঘুম রাত পার করার কথা লিখে পোস্ট করেন।
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে সোমবার শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন থানায় এবং স্থাপনায় হামলা হয়। এ অবস্থায় আতঙ্কের মধ্যে মঙ্গলবার পুরো ঢাকা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সড়কে নেমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। পরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও থানার নিরাপত্তায় আনসার নামানো হয়।