কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে মিরপুরে রেস্তোরাঁকর্মী সিয়াম সরদার নিহতের মামলায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
Published : 16 Sep 2024, 05:55 PM
সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও সাবেক পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে ঢাকার মিরপুরে রেস্তোরাঁকর্মী মো. সিয়াম সরদার হত্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম মোশাররফ হোসেন এ আদেশ দেন।
আগের দিন রোববার রাতে নূরকে বেইলি রোডের নওরতন কলোনির বাসা থেকে এবং মাহবুব আলীকে সেগুনবাগিচা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রেস্তোরাঁকর্মী সিয়াম সরদার নিহতের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মিরপুর মডেল থানার উপ পরিদর্শক আব্দুর রহমান।
আদালতে আসাদুজ্জামান নূরের পক্ষে জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী মো. লিয়াকত হোসেন। আর মাহবুব আলীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম আতাউল গনি।
তাদের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গেল জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তিন দিন পর গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর একে একে গ্রেপ্তার হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা।
এদের মধ্যে আছেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
শনিবার রাতে ঢাকার ইস্কাটনে গ্রেপ্তার হন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। পরদিন রোববার রাতে গ্রেপ্তার হলেন আসাদুজ্জামান নূর ও মাহবুব আলী।
এ দুজনসহ সাবেক মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ অন্তত ২৮ জন এখন কারাগারে।
নূর ও মাহবুব আলীকে কারাগারে পাঠানোর আবেদনে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাতে নিজের কর্মস্থল মিরপুর-১০ এ ‘হোটেল রাব্বানি’ থেকে বাসায় ফিরছিলেন ১৭ বছর বয়সী সিয়াম সরদার। সেসময় ‘আসামিদের নির্দেশে’ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চললে একাধিক গুলিতে সিয়াম নিহত হয়। এ ঘটনায় সিয়ামের বাবা মামলা দায়ের করেন, যেখানে আসাদুজ্জামান নূর ৮ নম্বর আসামি এবং মাহবুব আলী ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত’।
আসাদুজ্জামান নূরের জামিন চেয়ে তার আইনজীবী মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, “তিনি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বয়স্ক ও অসুস্থ। আমি তার জামিন চাই। তার সুচিকিৎসার জন্য আাবেদন করেছি। কারাগারে পাঠানো হলে তাকে যেন সুচিকিৎসা দেওয়া হয়।”
অপরদিকে মাহবুব আলীর আইনজীবী বলেন, “মাহবাবু আলী একজন আইনজীবী। তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য হিসেবে নিয়মিত আইন পেশায় যুক্ত। তিনি বিগত সরকারের কার্যকলাপের বিরোধী ছিলেন। এই বিরোধিতার কারণে তাকে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের জায়গা থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ মামলার ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাকে শুধু সন্দেহবশত এ মামলায় জড়িত করা হয়েছে।”
জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে প্রসিকিউশনের আদালত পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “এ মামলায় তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। মামলার তদন্ত চলছে, যা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে জেল-হাজতে আটক রাখা প্রয়োজন।”
সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-২ আসনে পঞ্চমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।
এ আসন থেকে ২০০১ সালে প্রথমবারের মত নৌকা প্রতীকে তিনি সংসদ সদস্য হন। এরপর আরও চারটি নির্বাচনে জয় জান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে জেতার পর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আসাদুজ্জামান নূরের জন্ম ১৯৪৬ সালে ৩১ অক্টোবর নীলফামারীতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাম রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পরে পুরো মনোযোগই দেন নাট্য আন্দোলনে।
অভিনয়শিল্পী ও আবৃত্তিকার হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়া নূর ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করলেও ৯০ এর দশকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
অপরদিকে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাহবুব আলী। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফের জয় পেলে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে প্রায় এক লাখ ভোটে হেরে যান তিনি।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের পাশাপাশি স্ত্রী ও পরিবারের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। তার বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন-