“আজ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু হবে,” বলেন চিফ প্রসিকিউটর।
Published : 21 Apr 2025, 03:52 PM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
রোববার তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর এই প্রথম কোনো মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ল।
হাবিবুর রহমান ছাড়াও ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, রমনা জোনের সাবেক এডিসি শাহ আলম মো. আকতারুল ইসলাম ও এসি মো. ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলামকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন পলাতক।
চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তদন্ত শুরুর ১৯৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করল তদন্ত সংস্থা।
তদন্তে কী পাওয়া গেছে, সেই তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ে থেকে ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ৬ জনকে হত্যা করেন আসামিরা।”
তিনি বলেন, “আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। আজ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালেরও ‘সম্পৃক্ততা’ রয়েছে মন্তব্য করে তাজুল বলেন, “যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির তদন্ত চলছে, সেজন্য তাদেরকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি। তবে নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনার যে ভূমিকা রয়েছে তাদের, সেটার বর্ণনা এই চার্জশিটে রয়েছে। কারণ শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে তার অধীনস্তরা মাঠ পর্যায়ে থেকে ওই নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাকর্মীরা বাস্তবায়ন করেছেন।”
প্রধান প্রসিকিউটর বলেন, “চাঁনখারপুল এলাকায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আরো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সেসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছেন। সেসব অপরাধের তদন্ত চলছে। তদন্ত সম্পন্ন হলেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে তদন্ত সংস্থা।
“যেহেতু ৬ জনকে হত্যার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রথমেই সম্পন্ন হয়েছে, সেজন্য এটাই প্রথমে দাখিল করা হয়েছে।”
সাভারের আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তাজুল।
তিনি বলেন, “তদন্ত শেষ হয়েছে। এখন ফাইনাল টাচ চলছে। এটার প্রতিবেদন পেয়ে গেলে চাঁনখারপুল ও আশুলিয়ার ঘটনার বিচার একই সময়ে করা সম্ভব হবে।”
চাঁনখারপুলের মামলায় ৯০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়াও দালিলিক তথ্য-প্রমাণ যুক্ত করা হয়েছে। আছে ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ১৯টি ভিডিও ক্লিপ, ১১টি পত্রিকার রিপোর্ট, ২টি অডিও কল।
তাজুল ইসলাম বলেন, “এর মধ্যে একটি অডিও কল রয়েছে হাবিবুর রহমানের, যিনি পুলিশ কমান্ড সেন্টার থেকে ওয়ারল্যাসের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেন পুলিশ সদস্যদের। উনার এই নির্দেশের পরই প্রাণঘাতি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন পুলিশ সদস্যরা।”
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে আরো ১১টি দলিল দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনও রয়েছে। আছে ছয় জন শহীদের ছয়টি ডেথ সার্টিফিকেট।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ অগাস্ট চাঁনখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থী শহীদ আনাসসহ ৬ জনকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সারাদেশ জুড়ে, সেসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর ঘটনাগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করছে তদন্ত সংস্থা।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এ মামলায় যারা পলাতক আসামি, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিচারের সময় পলাতক থাকলে তাদের বিষয়ে পত্রিকায় ট্রাইব্যুনাল থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। যদি হাজির না হয়, তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে। তখন তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মামলা পরিচালনা করবেন।