উচ্ছেদ অভিযানের ওপর হাই কোর্টের স্থিতাবস্থার এক মাস পার না হতেই মিরনজিল্লায় সংঘর্ষ হয়েছে।
Published : 10 Jul 2024, 08:56 PM
ঢাকার বংশালের আগাসাদেক রোডের পাশে মিরনজিল্লা কলোনির বাসিন্দা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
বুধবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে এ ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন বলে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন।
মিরনজিল্লা কলোনির বাসিন্দারা বলছেন, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার হাজী আউয়াল তার অনুসারী ও বহিরাগতদের নিয়ে হামলা চালিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে কমিশনারের সমর্থকদের দাবি, কলোনির লোকজনের সঙ্গে তাদের রুম বরাদ্দের বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন কমিশনার। সেখানে কলোনির সদস্যরা ইটপাটকেল ছুঁড়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালান।
হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বহু বছর ধরে এ কলোনিতে বসবাস করছেন। সেখানে এখন প্রায় ৪ হাজার মানুষের বসবাস।
মিরনজিল্লা হরিজন সিটি কলোনি ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতাদের দাবি, কলোনির বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে সেখানে বহুতল মার্কেট করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
এর আগে এ কলোনি উচ্ছেদের জন্য নোটিস দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি। পরে তা চ্যালেঞ্জ করে তিন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট রিট আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ জুন এ হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের ওপর এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করে হাই কোর্ট। পাশাপাশি বসবাসের বিকল্প ব্যবস্থা না করে হরিজনদের উচ্ছেদ না করতে ডিএসসিসিকে নির্দেশও দেওয়া হয়।
তবে হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে সিটি করপোরেশন। পরে চেম্বার আদালত হাই কোর্টের আদেশের বিষয়ে ‘নো অর্ডার’ দেয়।
উচ্ছেদ অভিযানের ওপর হাই কোর্টের স্থিতাবস্থার এক মাস পার না হতেই বুধবার মিরনজিল্লায় এ সংঘর্ষ হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত রুবেল নামে এক ব্যক্তির চাচাতো ভাই জামাল বলেন, “৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার হাজী আউয়ালসহ আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। কমিশনার সেখানে গিয়েছিলেন সুইপারদের সঙ্গে কথা বলতে যে তাদের জন্য রুম বরাদ্দ রয়েছে।
“রুম বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে গেলে সেখানে সুইপাররা উপর থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে এরা আহত হয়। ঘটনাস্থলে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও ছিলেন।”
কলোনির বাসিন্দা আহত বিরু দাস বলেন, “কমিশনারসহ তার লোকজন এক থেকে দেড়শ পোলাপান নিয়ে কলোনিতে আসে। সেখানে আমরা বলেছিলাম, এখানে সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট আছে, আরও কর্মকর্তা আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলব। বহিরাগত অনেক লোকজন নিয়ে আসায় তাদেরকে চলে যেতে বলা হয়।
“পরে তাদের লোকজন আমাদের ওপরে হামলা চালায়। এতে আমরা অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন আহত হই।”
আহত সুইপার কলোনির পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন- শুভ (৩৬), কারান দাশ (২৫), নিরঞ্জন (৬৫), নিলয় (১৮), রূপ কুমার দাস (১৮), প্রশান্ত দাস (১৮), শিবলাল (২০), বিরুদাস (৪০), রিপন দাস (২৫), রিকু দাস (৪৫), ঋষি কুমার (১৯), দীপ্ত (১০), রনি (৩২), উদয় (২০, বিমল দাস (২৪), মির লাল (৪৬)।
এছাড়া প্লাস্টিক ব্যবসায়ী মো. নাঈম (৪০), ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মো. রুবেল (৩৭), রুবেল গাজী (৩৫) ও মকবুল হোসেন (৫০) আহত হয়েছেন।
বিরু দাস জানান, এখানে তাদের নতুন রুমের চাবি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। তাদের জন্য অন্তত ৬০ থেকে ৭০টি রুম বরাদ্দ ছিল। কিন্তু ৫৭টি চাবি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আউয়ালের মোবাইল ফোন কল দিলে তিনি ধরেননি।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, “আহতরা জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের অবস্থায় গুরুতর নয়।”
এদিকে সংঘর্ষের এ ঘটনার পর কলোনির বাসিন্দাদের পক্ষে করা এক আবেদনে উচ্ছেদ অভিযানে ফের স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
মিরনজিল্লার ঘটনায় নিন্দা
মিরনজিল্লায় সংঘর্ষের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
বুধবার জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “হাই কোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নতুন বরাদ্দ দেওয়ার নামে উচ্ছেদ তৎপরতা উদ্দেশ্যমূলক। শত বছর ধরে বসবাসরত হরিজনদের উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।”
কলোনির বাসিন্দাদের ওপর আক্রমণের অভিযোগে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
জোটের পক্ষে বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা শিশু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী বিবৃতি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-
হরিজনদের উচ্ছেদের আগে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান চুন্নুর