তখন মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। তবু্ও চারদিকে উৎসবের আমেজ, ঢাকার আনাচে-কানাচে ফুটছে বাজি; সবাই মেতে আছেন বিশ্বকাপের ফুটবল আনন্দে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছের চিত্রটাও ব্যতিক্রম নয়।
তবে এর কিছুটা দূরেই এক মায়ের আকাশ ভেঙে পড়েছে; তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তার আদরের ধন, ছোট্ট সোনামনিটা।
হাসপাতালে ঢোকার মুখে ফুটবল ভক্তদের উচ্ছ্বাসের হুল্লোরে চারপাশের সবকিছুই চাপা পড়ে গেছে। অদূরে হাসপাতালের লাশঘরের সামনে এক মায়ের আত্মচিৎকার বেশি দূরে পৌঁছাচ্ছে না।
দুই বছর দুই মাসের শিশুকন্যাকে হারিয়ে সেখানে আছড়ে-পিছড়ে কাঁদছেন রাবেয়া বসরী তুলি। তার সোনামনি রাইসা সিদ্দিকার থেতলানো দেহটা পড়ে রয়েছে লাশঘরে রাখা ট্রলির ওপরে।
রোববার রাতে মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় বাসের ধাক্কায় রিকশারোহী রাবেয়ার কোল থেকে ছিটকে পড়ে রাইসা। এরপর শিশুটির মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় বাসের চাকা।
পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান শিশুটি আগেই মারা গেছে।
লাশঘরের সামনে মা রাবেয়ার কান্না থামছিলই না। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “আমারে একবার আমার মনিরে দেখতি দাও।”
পুলিশ আর স্বজনেরা তাকে ঠেকিয়ে রেখেছেন। দেখার মত মুখটি আর অবশিষ্ট নেই। তাও তিনি দেখতে চান।
পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন তাকে বলছেন, “আপা, দেখলে সহ্য করতে পারবেন না।”
কেঁদে আকুল শিশুটির মা বলছিলেন, “মুখ দেখপোনানে একবার হাতটা ধরব, পা টা দেখপো। মারে তুই আমারে ছাইড়ে চইলে গেলি।”
দারুসসালাম থানার উপপরিদর্শক নাজমুল জানান, শিশু রাইসাকে নিয়ে তার মা রিকশায় যাচ্ছিল। মিরপুর এক নম্বর এলাকায় বিআরটিসির একটি একতলা বাস রিকশাটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে শিশুটি ছিটকে রাস্তায় পড়ে ওই বাসের চাকায় পিষ্ট হয়। পুলিশ বাসটি ও এর চালক আল আমিনকে আটক করেছে।
হাসপাতালে স্বজনেরা জানান, শিশুটির বাবা গিয়াসউদ্দীন যন্ত্র প্রকৌশলী। রাবেয়া-গিয়াস দম্পতির একটিই সন্তান।
রোববার বিকেলে রাবেয়া তার এক আত্মীয়সহ মেয়েকে নিয়ে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে যান। রাত সাড়ে আটটার দিকে তারা বাসে করে মিরপুর চাইনিজ বলে পরিচিত জায়গাটিতে নামেন। সেখান থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য একটি রিকশা নেন তারা।
সেখানে রিকশাটি ইউটার্ন করার সময় সেটিতে ধাক্কা দেয় বিআরটিসির বাসটি। এতে শিশুটি মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুটি।
এসআই নাজমুল জানান, এ ঘটনায় দারুসসালাম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
শিশুটির লাশ বিনা ময়নাতদন্তে নিয়ে যেতে আবেদন করেছে পরিবার। লাশ নিয়ে গভীর রাতেই গ্রামের বাড়ি খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা।