র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু: তদন্ত কমিটিকে আরও সময়

আদালত বলেছে, এটি ‘স্পর্শকাতর বিষয়’, বারবার সময় দেওয়া হবে না, দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2023, 07:54 AM
Updated : 13 June 2023, 07:54 AM

নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের কর্মী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছে হাই কোর্ট।

আদালত বলেছে, এটি ‘স্পর্শকাতর বিষয়’, বারবার সময় দেওয়া হবে না, দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে।

রাষ্ট্রপক্ষ তদন্ত শেষ করার জন্য আবারও সময় চাইলে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের অভিযোগে গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে র‌্যাব আটক করে ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিনকে।

আটকের চার ঘণ্টা পর তাকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় র‌্যাব। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার সেখানে তার মৃত্যু হয়।

পরিবারের অভিযোগ, র‌্যাবের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে র‌্যাব বলেছে, ৪৫ বছর বয়সী ওই নারীকে আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যুর এই ঘটনায় হাই কোর্ট জেসমিনের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করে। র‌্যাবের কে কে জিজ্ঞাসাবাদে ছিল, তাও জানতে চায়।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে চিকিৎসক বলেন, সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ‘মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ’।

জেসমিনকে আটকের পর তাকেসহ আরও এক যুবককে আসামি করে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এনামুল।

জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হলে ঢাকায় বাহিনীটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে একটি চক্র দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিল। এই অভিযোগে সেই সচিবের উপস্থিতিতে আটক করা হয় তাকে।

পরে জেসমিনকে আটকের অভিযানে থাকা ১১ সদস্যকে প্রত্যাহার করে র‌্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।

এদিকে র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে ২৮ মার্চ এই রিট মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।

জনস্বার্থে করা ওই রিট মামলায় স্বরাষ্ট্র সচিব, র‌্যাবের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৫ এপ্রিল উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয় কমিটিতে। তদন্ত শেষ করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় জড়িত র‌্যাব সদস্যদের দায়িত্ব থেকে আপাতত সরিয়ে রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া বা গ্রেপ্তার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত।

হাই কোর্টের ওই আদেশে পরে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা মে মাসের শেষ দিকে নওগাঁয় গিয়ে জেসমিনের ছেলে, ভাই, মামা, বাড়িওয়ালা, প্রত্যক্ষদর্শী এবং র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজপাড়া থানা, নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতাল, সদর থানাসহ বিভিন্ন স্থান তারা পরিদর্শন করেন।

মাহমুদুল হোসাইন খান সে সময় বলেছিলেন, তারা ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে তা দিতে না পারায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষে আরও দুই মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।

আইনজীবী ভৌমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তাদের সময়ের আবেদনটির বিরোধিতা করেছি। বলেছি, আদালতের আদেশের এক মাস দুই দিন পর কমিটি গঠন করেছে। এখানে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। দুই মাস সময় দেওয়া ঠিক হবে না।

“তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে হাই কোর্ট বলেন, ‘আমরা দুই মাস সময় দিচ্ছি। দুই মাস কিন্তু দুই মাসই। এ সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। এটা সেনসেটিভ ম্যাটার। বারবার সময় দেওয়া হবে না। পরে আদালত দুই মাস সময় আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।”

পুরনো খবর