৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা থেকে পিএসসির ভেতরেই খাতা দেখার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান চেয়ারম্যান।
Published : 08 Apr 2025, 07:59 PM
দীর্ঘসূত্রতার গ্যাড়াকল থেকে চাকরিপ্রার্থীদের মুক্তি দিতে সরকারি চাকরিতে ঢোকার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পরীক্ষা বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি থেকে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া এক বছরে নামিয়ে আনতে কাজ করছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
মঙ্গলবার কমিশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের কাছে সেই পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন পিএসসি চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম।
বর্তমানে যে পদ্ধতিতে বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া বা খাতা দেখা হয় তাতে পুরো প্রক্রিয়ায় সাড়ে তিন বছর সময় লেগে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ওপর যে অর্পিত দায়িত্ব সেটা হচ্ছে, বিসিএসের সাড়ে তিন বছরটা কমিয়ে এক বছর করা।
“এক বছর করতে হলে বর্তমান যে সিস্টেমে পরীক্ষা নেওয়া হয়, আমরা যদি চেষ্টাও করি সেটা সম্ভব কতটা হবে আমি সন্দিহান। আমাদেরকে উদ্ভাবনীমূলক ব্যবস্থায় যেতেই হবে। উন্নত দেশেও সেটা করা হয়।”
বিসিএস প্রক্রিয়ার সময় কমিয়ে আনতে কমিশন ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের মূল টার্গেট হচ্ছে, বিসিএসের যে পরীক্ষা এখন হয়, অন অ্যান এভারেজ থ্রি অ্যান্ড হাফ ইয়ার্স লেট হয়, আমরা এ বিষয়টা জানি, আমরা জানি এ বিষয়টা কমানো উচিত। তার জন্য আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি বা করছি।”
৪৬তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা থেকে পিএসসির ভেতরেই খাতা দেখার ব্যবস্থা করা হবে তিনি বলেন, “আমরা নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছি। যেটাকে আমরা বলছি সার্কুলার সিস্টেম অব চেকিং এক্সাম স্ক্রিপ্টস।
“আমরা খাতা পাঠাই, প্রথম পরীক্ষকের কাছে যায়। প্রথম পরীক্ষক দেড় মাস-দু মাসব্যাপি পুরোটা খাতা দেখেন। যখন ওগুলো ফিরে আসে আমরা সেকেন্ড এক্সামিনারের কাছে পাঠাই। সেকেন্ড এক্সামিনার একই রকমের সময় নেন। খাতা দেখতে তিন চার মাস লেগে যায়। তারপরও যদি এমন হয়, দুজন পরীক্ষকের দেওয়া নম্বরের মধ্যে পার্থক্যটা ২০ এর বেশি হয়, তাহলে থার্ড এক্সামিন করতে হয়। তাহলে খাতা দেখানোর যে প্রক্রিয়া সেটি আমাদের সময় কমানোর যে চিন্তা, সে চিন্তার সাথে যায় না। তাই আমরা সার্কুলার সিস্টেমে যাচ্ছি। যেটি একটা ইনোভেটিভ আইডিয়া।”
‘সার্কুলার সিস্টেম অব চেকিং এক্সাম স্ক্রিপ্টস’ প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যাও দেন পিএসসি চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “আমরা সবাই একটা জায়গায় বসব, এখানে একজন পরীক্ষক একটা মাত্র প্রশ্নের উত্তর দেখবেন। সেকেন্ড এক্সামিন যখন করি তখন দুইজন পরীক্ষকের স্ট্যান্ডার্ড আলাদা হতে পারে। একজন এক্সামিনার ৬০ দিলে আরেকজন এক্সামিনার ৩০ দিতে পারেন।
“কিন্তু যখন সার্কুলার সিস্টেমে একটা কোয়েশ্চেন একজন এক্সামিনার দেখবেন, তখন অ্যাসেস করতে পারব, কার অ্যান্সারটা সবচেয়ে ভালো। কোন অ্যান্সারটা কোন অ্যান্সারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেটার। এটা বুঝতে পারার কারণে ফেয়ারনেস এনশিউর করাটা একটু সহজ। এটা যদি আমরা করতে পারি, দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনও নাই।”
এক প্রশ্নে মোবাশ্বের মোনেম বলেন, “আপনি (কোন পরীক্ষক) যদি কম নম্বর দেন, তাহলে রোল নম্বর যাতে না জানা যায় আমরা সেটির ব্যবস্থা করব। রোল নম্বর যদি জেনেও যান, বাকি যে প্রশ্নগুলো আছে সেগুলোতে সবাইতো আর এক রকম নম্বর দেবে না। একটা বারকোড থাকে। সেই বারকোডটা যখন আমরা স্ক্যান করব তখন আমরা জানব যে, একজন পরীক্ষার্থী কোন প্রশ্নে কত নম্বর পেয়েছেন।
“অল দিস ক্যান বি ডান। অল দিজ আর পসিবিলিটিস। আমরা এগুলোকে এক্সপ্লোর করতে চাই।”
তবে হাঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে না বলে জানান চেয়ারম্যান।
“আমরা যা কিছুই করি না কেন, হুট করে করব না। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব, পাইলটিং করব, এক্সপেরিমেন্ট করব।”
গত কমিশন ৪৫তম বিসিএসে গণিতের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেখানে দেখা গেছে খাতা অতিদ্রুত দেখা সম্ভবপর হয়েছিল। ওটা ছিল গণিত, টেকনিক্যাল একটা সাবজেক্ট। আমি যখন সোশলজির খাতা দেখব, সেটাতো ভিন্ন রকমের হবে। সেটা কেমনভাবে করা যেতে পারে, সেখানে কজ অ্যান্ড ক্লজগুলো কি রকম হবে সেটা পাইলটিং করলে বুঝতে পারব, এক্সপেরিমেন্ট করলে বুঝতে পারব।”
ব্রিফিংয়ে কমিশনের অন্য সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।