এ বিষয়ে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তদন্ত করছে বলেও জানিয়েছেন আজহারুল ইসলাম।
Published : 12 Apr 2025, 12:49 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আগুন লেগে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার’ একাধিক মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনার পেছনে ‘ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দোসরদের’ হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি বলেছেন, চারুকলায় 'ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব' পুড়িয়েছে ‘হাসিনার দোসররা’।
শনিবার সকালের দিকে লাগা আগুনে শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ পুড়ে যায়। পাশাপাশি 'শান্তির পায়রা' মোটিফের একাংশতেও আগুন লেগে সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কীভাবে আগুন লাগল তা তদন্ত করে জানানো হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম।
ফেইসবুক পোস্টে এই ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
ফারুকী বলেন, “এই দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে- সফট আওয়ামী লীগ হোক বা আওয়ামী বি টিম হোক- তাদের প্রত্যেককেই দ্রুত আইনের আওতায় আসতে হবে।”
সংস্কৃতি উপদেষ্টার কথায়, এই ঘটনার পর ‘হাসিনার দোসররা জানিয়ে দিয়ে গেল’ বাংলাদেশের মানুষ এক হয়ে উৎসব করুক, তারা ‘এটা চায় না’।
তিনি বলেন, “আমরা এখন আরও বেশি ডিটারমাইনড, এবং আরো বেশি সংখ্যায় অংশ নিব।”
শোভাযাত্রা থামানোর চেষ্টায় আওয়ামী লীগের হয়ে যারা কাজ করছে, তাদেরকে কেবল আইনের আওতায় আনা হবে তা নয়, এবারের শোভাযাত্রা যেন আরও বেশী তাৎপর্যপূর্ণ হয়, সেটিও নিশ্চিত করার কথা বলেছেন উপদেষ্টা।
ফারুকী বলেন, “গত কিছুদিন জুলাই আন্দোলনের পক্ষের অনেকেই বলেছিলেন, এবারের শোভাযাত্রা সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভিন্ন রকমের হচ্ছে। এখানে ফ্যাসিবাদের ঐ বিকট মুখ না রাখাই ভালো। আমরাও সব রকম মত নিয়েই ভাবছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মত জানার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কালকের ঘটনার পর এই দানবের উপস্থিতি আরো অবশ্যাম্ভাবী হয়ে উঠলো। জুলাই চলমান।”
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম বলেছেন, চারুকলা অনুষদ পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৮৩২ উদযাপনে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের চেষ্টায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী মোটিফের সাথে প্রতীকী দানবীয় ফ্যাসিস্টের মোটিফ তৈরি করে।
“কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সাথে জানাচ্ছি যে, ভোর আনুমানিক ৪টা ৫০মিনিটের দিকে দানবীয় ফ্যাসিস্টের প্রতীকী মোটিফে কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে।”
আগুনের এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তদন্ত করছে বলেও জানিয়েছেন আজহারুল ইসলাম।
অধ্যাপক আজহারুল বলেন, “তদন্ত হওয়ার পর আমরা এ বিষয়ে মন্তব্য করবো। এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কেন আগুন লেগেছে। কারা আগুন দিয়েছে।”
আনন্দ শোভাযাত্রা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শনিবার ফজরের নামাজের সময় মোটিফ দুটোতে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করছেন তারা।
এবারে বাংলা নববর্ষ পড়েছে সোমবার, ওইদিন হবে বর্ষবরণ উৎসব।
উৎসবের আগে এভাবে 'ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি' নামে ওই মোটিফে আগুনের ঘটনা ‘পরিকল্পিত’ বলেও সন্দেহ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।
অধ্যাপক আজহারুল জানিয়েছেন ঘটনার পরই ফায়ার সার্ভিসসহ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ডিএমপি পুলিশের কর্মকর্তারাও। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আলাদাভাবে এই ঘটনার তদন্ত করছে।
বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি 'ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি' মোটিফটির উচ্চতা ছিল ২০ ফুট।
উৎসবের আগে এখন এতবড় মোটিফ ফের বানানো যাবে কী না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম।
পুড়ে যাওয়া মোটিফে একজন হাঁ করা দাঁতালো নারীর মুখাকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। যার মাথায় ছিল ২টি শিং। নাক ছিল বিশালাকার এবং চোখ দুইটি ছিল ভয়ানক।
মোটিফটি মূলত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি হিসাবে বানানো হয়েছিলো বলে অনেকে মনে করেন। এ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনাও চলছিল।
জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে এবারের নবর্ষের প্রতিপাদ্য হলো 'নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান'। এটিকে সামনে রেখেই ওই মোটিফ বানানো হয়েছিল।
এবারের শোভাযাত্রায় এই মোটিফটিই সামনে রাখার পরিকল্পনা ছিল। এছাড়া আরো ৫টি বড় মোটিফ থাকার পরিকল্পনা আছে। যার মধ্যে শান্তির পায়রা মোটিফটিও আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এবারের শোভাযাত্রার আয়োজনে বানানো অন্য বড় মোটিফগুলোর মাঝে রয়েছে, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির পায়রা, পালকি, তরমুজ, গণঅভ্যুত্থানে নিহত মুগ্ধের পানির বোতল।
এছাড়া, অন্যান্য মোটিফের মধ্যে থাকবে, ১০টি সুলতানি ও মোগল আমলের মুখোশ, ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০টি রঙিন চরকি, ২০০টি বাঘের মাথা, ৮টি তালপাতার সেপাই, পলো ১০টি, ৫টি তুহিন পাখি, ৬টি মাছের চাঁই, ৪টি পাখা, ২০টি মাথাল, ২০টি ঘোড়া, ৫টি লাঙল, ৫টি মাছের ডোলা এবং ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস।
বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামটি এবারের আয়োজনে থাকছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এই শোভাযাত্রার নাম থেকে ‘মঙ্গল’ শব্দটি ছেঁটে ফেলে নতুন নামকরণ হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। নাম পরিবর্তন নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই আগুনের ঘটনা ঘটলো।
চারুকলায় পুড়ল 'ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি' ও 'শান্তির পায়রা' মোটিফ
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ক্ষোভ