মামলায় হারুনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়েছে।
Published : 05 Sep 2024, 10:11 PM
জমি দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে শায়লা শারমিন নামে এক নারী বৃহস্পতিবার তাদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। পরে মহানগর হাকিম মাহবুব আহমেদ মোহাম্মদপুর থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলায় হারুনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি ছাড়াও এ মামলায় ঢাকা উদ্যান সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বাদল ও ‘রিপন পারফিউমারি হাউজের’ মালিক ফয়জুর রহমান রিপনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে শায়লা শারমিন বলেন, তার মা মমতাজ আরা ১৭ বছর আগে নবীনগর হাউজিং প্রকল্পের একটি সম্পত্তি কিনে ভোগদখল করে আসছেন। জমির সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকায় তিনি সেখানে বাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর জমির মাটি ভরাট ও পাইলিংয়ের কাজ শুরু করলে ২০২০ সালের ১০ জুলাই বাদল ও রিপন ওই জমির মালিকানা দাবি করে নির্মাণ কাজে বাধা দেন।
অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা জমিতে টানানো সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে এবং জায়গা খালি করার জন্য হুমকি দেয়। বিভিন্ন সময়ে শায়লা শারমিন, তার মা ও পরিবারের সদস্যদের হয়রানি ও জীবননাশের হুমকি দেয়। জমি দখল করতে না পেরে বাদল ও রিপন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে চাপ সৃষ্টি করে। ২০২০ সালের ১৫ জুলাই হারুনের মাধ্যমে শায়লা শারমিন ও তার স্বামীকে ডিবি অফিসে তলব করা হয়।
“সেখানে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন আসামিরা। টাকা না দিলে জমি দখল করে নেওয়ার পাশাপাশি মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো ও গুম-খুনের হুমকি দেওয়া হয়।”
শায়লা শারমিন বলেন, আসামিদের চাপে তিনি ২০২০ সালের ৬ অগাস্ট ২০ লাখ টাকা দেন। এরপরও তারা নির্মাণ কাজ বন্ধের চাপ দিতে থাকে এবং আরও টাকা দাবি করে। পরে সবশেষ ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর আরও ৫ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। চাঁদা আদায়ে তারা হেনস্তা ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে।
ডিবিতে দায়িত্ব পালন করা আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের কোনো খোঁজ মিলছে না গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে।
২০১১ সালের ৬ জুলাই বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুককে ধাওয়া করে পিটিয়ে জামা ছিঁড়ে ব্যাপক আলোচিত হন হারুন। সেসময় পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেন হারুন। হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি নারায়ণগঞ্জের অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ‘টক্করে’ গিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দেন।
২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করেও আলোচনার জন্ম দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এছাড়া ডিবি অফিসে অভিযোগ নিয়ে যাওয়া পরিচিত ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন সময়ে ভাত খাইয়ে আলোচনার জন্ম দেন হারুন। ডিবি অফিস পরিচিতি পায় ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ হিসেবে।
২০তম বিসিএস ক্যাডারে পুলিশের চাকরি নেওয়া হারুন ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগের বাহাদুর-অজয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একসময় চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এলেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন।