২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বিচার শুরু হওয়া এই মামলার সবশেষ সাক্ষ্যগ্রহণের কথা ছিল গত ২ অক্টোবর। সেদিনও কোনো সাক্ষী না আসায় আগামী ১৫ জানুয়ারি নতুন দিন নির্ধারণ করে আদালত।
Published : 14 Jan 2025, 08:49 AM
মতিঝিলে প্রায় ১০ বছর আগে ‘ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের’ কর্মী রিয়াদ হোসেনকে গুলি করে হত্যার বিচারকাজ এখনও শেষ হয়নি।
বারবার দিন নির্ধারণ হলেও সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলাটির বিচারকাজ একরকম ঝুলে আছে। মামলা নিয়ে আগ্রহ ‘কমে গেছে’ বাদী পক্ষেরও।
২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর বিচার শুরু হওয়া এই মামলার সবশেষ সাক্ষ্যগ্রহণের কথা ছিল গত ২ অক্টোবর। সেদিনও কোনো সাক্ষী হাজির না হওয়ায় আগামী ১৫ জানুয়ারি নতুন দিন নির্ধারণ করেন ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ ইব্রাহিম মিয়ার আদালত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সাক্ষী সমনের দায়িত্বে রয়েছেন এসআই মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট আদালতের প্রসিকিউশনের। এতদিন তারা কেন করেনি, তা আমার জানা নেই। সামনের তারিখে সাক্ষীদের হাজির করা হবে।”
সরকার পতনের পর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিল্লাল হোসেন বলেন, “আমি এই মামলার বিষয়ে জানি না। নথি দেখে সাক্ষী হাজির করে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করব।”
২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর রিয়াদকে হত্যা করা হয়। পরদিন ওয়ারী থানায় ঘরোয়ার মালিক সোহেলসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন রিয়াদের ভাই রিপন।
মামলায় ২০১৬ সালের ২২ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও ওয়ারী থানার ওসি আলিম হোসেন শিকদার।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি জসিম চৌকিদার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি ঘরোয়ার মালিক আরিফসহ তিনজনের জড়িত থাকার কথাও বলেছেন।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও গুলির আঘাতে মৃত্যুর কথা উল্লেখ আছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরেন তদন্ত কর্মকর্তা।
জসিমের জবানবন্দি অনুযায়ী, ঘটনার দিন শফিকুল নামে একজনের দেড় হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন চুরি হয়। এজন্য সন্দেহ করা রিয়াদকে। তাকে স্বামীবাগের একটি কক্ষে নিয়ে বেঁধে রাখেন মালিক আরিফ হোসেন সোহেল। রাত ১২টার দিকে জসিম, শফিকুল, সালাম, ইলিয়াসসহ হোটেলের আরেক কর্মী সেখানে যান।
জসিম জবানবন্দিতে বলেন, সেখানে গিয়ে তারা রিয়াদকে খুঁটিতে বাঁধা দেখতে পান। রেস্তোরাঁর মালিক তাকে লাঠি দিয়ে চার থেকে পাঁচবার আঘাত করেন। তখন রিয়াদ মোবাইল ফোন ও টাকা নেয়ার কথা ‘স্বীকার করেন’।
“এরপর সোহেল পকেট থেকে পিস্তল বের করে রিয়াদের গলার ডান পাশে গুলি করেন। রক্ত বের হতে দেখে তিনি হাত দিয়ে চেপে ধরেন; আমাদেরকেও চেপে ধরতে বলেন।”
জবানবন্দি অনুযায়ী, রিয়াদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ঘরোয়া মালিক তাদের বলেন, “মানুষের কাছে বলবি, মালিকের টাকা বাসায় পৌঁছে দেওয়ার পথে ছিনতাইকারীরা রিয়াদকে গুলি করেছে।”
ওই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের সরকারী কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। বাদী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।”
সাক্ষ্য দিতে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মামলার বাদী রিপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো খবর পাই না, তাই যাওয়া হয় না। মামলার কাগজপত্রও নাই। আসামিদের ভয়ে যেতে পারিনি। আর আমার মাও ভয়ে যেতে দেন না।”
রিপন বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। মামলা চালানোর সামর্থ্য নেই। মামলা চালানোর কয়দিন পর তারা আমাদের সঙ্গে আপসের কথা বলে।
“তারা বলে একটা দুর্ঘটনা যেহেতু ঘটে গেছে, এখন আর কী করা যাবে। তখন ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লাখ টাকা দেয়। পরে আরো ৩০ লাখ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আর দেয়নি। যোগাযোগও করেনি।”
বিচার চান কিনা জানতে চাইলে বলেন, “আমরা গরিব মানুষ; আমাদের কিছু নাই। ভাই তো চলে গেছে। মরে গেছে, মিলাদ পড়াতে হয়; তাতে খরচ হয়। ভাই মরে যাওয়ার পর মা দিনরাত কান্নাকাটি করে; অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
“মায়ের চিকিৎসা করাতে হয়। বিচার চেয়ে আর কী হবে; জেল তো খেটেছেই। ৪০ লাখ টাকা দিলে নিজেদের চলার ব্যবস্থা হবে; মাও তাতে রাজি। বাকি টাকাটা দিলে ভালোভাবে চলতে পারব।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী মোর্শেদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলাটি এখন সাক্ষ্য পর্যায়ে আছে। আসামিরা দেশেই আছেন এবং নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। আসামিদের সম্পর্কে এর বেশি তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়।”
রেস্তোরাঁর মালিক আরিফ হোসেন সোহেল বলেন, “টাকা নিয়ে আমাদের বাসায় যাওয়ার পথে ছিনতাইকারী রিয়াদকে গুলি করে। আমরা হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়।”
পরে প্রভাবশালী একটি পরিবার রিয়াদের পরিবারকে দিয়ে মামলা করায় দাবি করে সোহেল বলেন, “এই মামলায় আমি তিন বছর জেলও খেটেছি।”