সরকারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-সংগঠন ও দেশবাসীকে একযোগে কাজ করার অনুরোধ করেছেন তিনি।
Published : 24 Aug 2024, 10:38 PM
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই মুহূর্তে বন্যা মোকাবেলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রেখেছেন।
এ ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-সংগঠন ও দেশবাসীকে একযোগে কাজ করার অনুরোধ করেছেন তিনি।
শনিবার বিকালে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের সময় প্রধান উপদেষ্টা সবার প্রতি এই অনুরোধ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় হওয়া এই বৈঠকে দেশ-বিদেশের ৪৪টি এনজিওর কর্তা ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সরকার এই মুহূর্তে বন্যা মোকাবেলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের অব্যশই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। এ দায়িত্ব পালনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
মুহাম্মদ ইউনূস বন্যা মোকাবেলায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ বিতরণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, “বন্যা মোকাবিলায় সরকার, এনজিওসহ যারা যারা কাজ করছে, তাদের সবার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে জেলা পর্যায়েও বন্যা মোকাবেলার কাজ সমন্বিতভাবে করতে হবে।”
“প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, কোটি কোটি মানুষ বন্যায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাদের মহৎ উৎসাহের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে,” সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন শফিকুল।
চলমান বন্যা পরিস্থিতি ১১ জেলাতেই সীমাবদ্ধ আছে বলে তথ্য দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তবে বেড়েছে বানভাসির সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮।
উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে গত কয়েকদিন ধরে ভাসছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার।
বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে আরও বেশি কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করে বন্যাপরবর্তী খাদ্য ও স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব পক্ষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান রাখেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “তরুণরা আমাদের জন্য মহৎ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। দ্রুত এই সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে।”
তিনি আরও বলেছেন, কেবল বন্যা মোকাবেলায় গুরুত্ব দিলে হবে না, কীভাবে দেশকে বন্যামুক্ত রাখা যায় সেদিকেও মনোযোগী হতে হবে।
বৈঠকে অংশ নেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
তার ভাষ্য- প্রধান উপদেষ্টা মনে করছেন মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানোর জন্য এনজিওগুলো একটি বড় শক্তি।
“সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় আনার কথা বলা হয়েছে বৈঠকে। দেখা যাচ্ছে কোথাও বেশি সাহায্য যাচ্ছে, আবার কেউ পাচ্ছে না। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে না করে সবাই মিলে কাজ করতে পারি।”
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করে কী করা দরকার তা ঠিক করতে হবে। কৃষি, বসতভিটা, সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য, শিশু, নারী- সব কিছুতে বড় বিপর্যয় হয়ে গেছে।
“আমরা অনেক কিছু করতে পারি। সেজন্য ফান্ড দরকার। আমরা পরামর্শ দিয়েছি, রেমিট্যান্স যোদ্ধারা আত্নীয়দের টাকা পাঠাচ্ছে, সেগুলো যেন দ্রুত পৌঁছানো যায়। “আমাদের বড় বড় ডায়াসপারা আছে, তারা টাকা দিতে চান; কিন্তু আস্থার সংকট রয়েছে। অনেকে আর্মিকে দিচ্ছেন। আমাদের কিছু এনজিও সহযোগিতা দিতে চায়, তারাও আস্থার জায়গা খুঁজছে; সেনাবাহিনী তাদের আশ্বস্ত করেছে।”
আস্থার সংকট কাটাতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহযোগিতা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন এনজিও শীর্ষ ব্যক্তিরা।
সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয় সে তাগিদ দিয়ে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “লক্ষ লক্ষ প্লাস্টিকের বোতল হচ্ছে, এগুলোতে তো হাওড়-নদীর দম বন্ধ হয়ে যাবে।”
বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মোবাইল টয়লেট নিশ্চিত করা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পৌঁছানোর মতো বিষয়ও বৈঠকে ওঠে এসেছে।