তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। তাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ‘সামগ্রিকভাবে দেখা দরকার’।
Published : 14 Oct 2024, 08:06 PM
প্রতিরক্ষা খাতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা বাড়ানোর ‘সুযোগ’ রয়েছে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি সামনে রেখে সোমবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রয়েছে। আমরা জানি, চীন আমাদের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রধান সরবরাহকারী।
“আমরা সামরিক বাহিনীকে যে আরও আধুনিক করতে চাইছি, সেখানে চীনের সঙ্গে আরও সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।”
সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যতের আউটলুক’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি।
সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্কে থাকার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমাদের খুব গভীর প্রশিক্ষণের সহযোগিতা রয়েছে, সেটা অব্যাহত রাখা এবং যদি সম্ভব হয় আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।”
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা বাড়ানো দরকার বলে মত দেন তিনি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। তাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ‘সামগ্রিকভাবে দেখা দরকার’।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ‘বহুমুখী’ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা, জ্বালানি, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে দুই দেশ একসঙ্গে আরও কাজ করতে পারে।”
রোহিঙ্গা সঙ্কটে চীন ও অন্যরা সহায়তা করছে বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ধরনের উদ্যোগ কোনো ফল বয়ে আনেনি। আমি মনে করি মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব আছে এবং এটি বাস্তবতা।
“চীন যেন এ বিষয়ে আরও বেশি ভূমিকা রাখে, যাতে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে পারে তাদের অধিকার ও নিরাপত্তাসহ।”
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির কমানোর উপায় বের করার পরামর্শ দিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের মাধ্যমে চীনে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হলে আমাদের জন্য ভালো হবে। চীনের সহায়তায় কিছু প্রকল্প চলমান আছে এবং আমরা আশা করি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব রাখবে।”
২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন ছিল বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ কেবল ৬০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, বাকিটা করেছে চীন।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, উন্নয়নের প্রসার এবং মানুষের জীবনজীবিকার উন্নতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চীনের ‘দৃঢ়’ সমর্থনের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
তিনি বলেন, “চীন সরকার নিশ্চিত যে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে এবং সমস্যা উত্তরণে নেতৃত্ব দেবে। নতুন সরকার স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে দ্রুত অগ্রসর হবে।”
অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের সময়ে প্রথম বিদেশি বিনিয়োগ চীন থেকে আসার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।
নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে দুদেশের কাজের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (এসআইআইডি) অ্যাকাডেমিক অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের পরিচালক অধ্যাপক ইয়াং জিয়েমিয়ান অনুষ্ঠানে বলেন, “প্রথমে দুদেশকে কেকটা বড় করে বানানোর দিকে নজর দিতে হবে।
“একসাথে কাজ করতে পারলে কেকটা আকারে বড় ও ভালো হবে। এরপর আমরা সুষ্ঠু ও কার্যকর বণ্টন করতে পারব।”
বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান এ এফ এম গওসুল আজম সরকারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে অন্যদের মধ্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শ্বেতপত্র নিয়ে গঠিত কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস বক্তব্য দেন।