ছাত্র জনতার আন্দোলন যে ‘অপার সম্ভাবনার দ্বার’ খুলেছে, সেটাকে নস্যাৎ করার জন্যই বিভিন্ন চক্র কাজ করছে, সতর্ক করেন তিনি।
Published : 04 Oct 2024, 12:56 AM
বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এবার ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কার’ কথা জানিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী – বিজিবি।
বৃহস্পতিবার বাহিনীর সদরদপ্তর পিলখানায় সংবাদ সম্মেলন করে মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন।
দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিয়েই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সরকার পতন আন্দোলনের সময় বিজিবির ভূমিকা, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।
বিজিবি প্রধান বলেন, “দুর্গাপূজায় কোনো ঝামেলা বা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার সম্ভাবনার কথা যদি বলি, অবশ্যই আছে।"
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, "অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের কথা বলি, আনসার বাহিনীর মধ্যে কিছুটা বিদ্রোহের আশঙ্কা শুরু দিকে; পার্বত্য চট্রগ্রামের পরিস্থিতি বলেন, বিভিন্ন কলকারখানার মধ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা বলেন, অনেক কিছুই আমরা দেখতে পাচ্ছি।"
ছাত্র জনতার আন্দোলন যে ‘অপার সম্ভাবনার দ্বার’ খুলেছে সেটাকে নস্যাৎ করার জন্যই বিভিন্ন চক্র কাজ করছে বলেও সতর্ক করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পূজা হবে বলেও আশাবাদী বিজিবি প্রধান।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার মধ্যে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। বিভিন্ন এলাকায় মণ্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের খবরও আসছে।
বুধবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেছেন, “পূজাকে ঘিরে একটু উসকানি আছে। কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমরা প্রত্যেকটি বিষয়কে অত্যন্ত সচেতনভাবে দেখব যাতে কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে।”
এর মধ্যেই আগামী ৯ অক্টোবর থেকে পূজার প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। বিএনপিও মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের জন্য তাদের বিভাগীয় কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে।
সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সারা দেশে ৮৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই অবস্থায় বিজিবি কেন শঙ্কা প্রকাশ করছে, তার ব্যাখ্যায় মহাপরিচালক বলেন, “সরকার পতনের দিন থেকে দুই একদিন সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়ের যেটা ‘আদৌ কোন ঘটনা না’, সেটা অতিরঞ্জিত করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছিল।
‘বিশেষ করে লালমনির হাট এবং ঠাকুরগাঁও এলাকার সীমান্তে সে সময় অনেক সংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভয় দেখিয়ে ওপারে যাওয়ার চেষ্টা তারা করছিল। সে ক্ষেত্রে বিজিবি গিয়ে বিএসএফসহ পতাকা বৈঠক করে তাদেরকে বুঝিয়ে ফেরত নিয়ে এসেছে। এ ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা দুর্গাপূজার মধ্যেও করতে পারে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সুন্দরভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সীমান্তে আট কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় দুই হাজার মণ্ডপে পূজা হচ্ছে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, এসব মণ্ডপে যেন নির্বিঘ্নে পূজা হয় সে ব্যাপারে তারা সব ধরনের কাজ করছে।
“টহল দেওয়া, সবার সাথে আলোচনা করা হচ্ছে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়। যেসব মণ্ডপ এলাকায় বিওপি (সীমান্ত চৌকি) নেই, সেখানে বেইস ক্যাম্প স্থাপন করে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।”
সীমান্তে মণ্ডপ ‘কমেছে’
গত বছরের চেয়ে এবার মণ্ডপের সংখ্যা কমেছে না বেড়েছে- প্রশ্ন করা হয় বিজিবি মহাপরিচালককে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘এক অর্থে’ কমেছে। গত বছর বা অন্যান্য সময় বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট মন্দির ছাড়াও বেশ কিছু জায়গায় মণ্ডপ হত, এবার সেটা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ‘সুদৃঢ় করা যায়’।
"সীমান্তবর্তী বেশ কিছু বড় মন্দির আছে, এপারেও আছে ওপারেও আছে। সেখানে ক্রস বর্ডার এ পূজায় উপস্থিতি অনেক হত। সেটা এবার একটু নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বিএসএফও যেমন বদ্ধপরিকর যে ক্রস বর্ডার বা মুভমেন্ট হবে না, আমরাও সেটা চেষ্টা করছি।"