হাসিবুরকে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে উদ্ধারের পাশাপাশি অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব।
Published : 25 Jan 2024, 12:58 AM
ঢাকা থেকে অপহরণের প্রায় এক মাস পর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে সুনামগঞ্জের সীমান্তের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে; যাকে ভারতের মেঘালয়ে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল।
গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে অপহরণের এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের তথ্যও বুধবার রাতে দিয়েছে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ।
এদিন রাতে এক বার্তায় হাসিবুর রহমান হিমেল নামের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে উদ্ধারের খবর জানায় র্যাব।
ওই বার্তায় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিমেলকে অপহরণের পর পাশবিক কায়দায় নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও রাজধানীর উত্তরা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও ওয়াকিটকিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে পুলিশের বিশেষ এ ইউনিট।
পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারীদের সঙ্গে পেশাদার অপহরণকারীরা যুক্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগে তারা ভারত থেকে লোক ধরে বাংলাদেশের সীমানায় হাওরাঞ্চলে নৌকায় আটকে রেখে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছে।
নিখোঁজের তথ্য পাওয়ার পর থেকে এ নিয়ে কাজ করা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) লালবাগ জোনের উপ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মশিউর রহমান বলেন, অনেক নাটকীয়তা শেষে হিমেল তাহিরপুর সীমান্ত অঞ্চলে এলে শেষ পর্যন্ত র্যাব তাকে জীবিত উদ্ধারে সমর্থ হয়।
হিমেল নামে ওই শিক্ষার্থীর বাসা রাজধানীর উত্তরায়। বাবা মারা যাওয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করতেন তিনি। গত ২৬ ডিসেম্বর নিজেদের গাড়ি নিয়ে ব্যবসার কাজে শেরপুরের দিকে রওনা দেওয়ার পর চালক সামিদুলসহ নিখোঁজ হন তিনি।
ডিবির উপ কমিশনার মশিউর বলেন, হাসিবুরের গাড়িচালক সামিদুলই অপহরণ চক্রটিকে তথ্য দেন যে তাকে অপহরণ করলে ভালো টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই অনুযায়ী তারা তাকে অপহরণের পরিকল্পনা করে।
তিনি বলেন, এই চক্রটা অনেকদিন ধরেই ভারত থেকে চিনি, জিরা, মসলা বাংলাদেশে নিয়ে আসত। এর পাশপাশি ভারতীয় ২-৪ জনকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে হাওরে আটকে রেখে টাকা আদায় করেছে। এই চক্রের একজন আব্দুল মালেক ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পরে মুক্তি পান। বের হয়ে আবারও এই কাজে নেমে পড়েন।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন নিয়ে যখন সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীগুলো ব্যস্ত। সেই ফাঁকে তারা হাসিবুরকে তুলে নিয়ে যায়। তারা ২৮ ডিসেম্বরেই তাকে নিয়ে মেঘালয়ে চলে যায়।
“আমরা যখন জানতে পারলাম তাকে মেঘালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তখন পুলিশ-র্যাবসহ সবগুলো সংস্থা উঠেপড়ে লাগে তাকে উদ্ধারের জন্য। তারা তাকে নিয়ে মেঘালয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে থেকেছে। সেখানে তারা আমাদের নাগালের বাইরে ছিল। আমরা ভারতের পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করি। তারা জানায় এই চক্রের সদস্যরা এর আগে এক-দুইজন ভারতীয়কে বাংলাদেশের সীমানায় এনে নৌকায় আটকে রেখেছিল।
“শেষ পর্যন্ত তারা তাহিরপুর সীমান্ত অঞ্চলে এলে শেষ পর্যন্ত র্যাব ভিক্টিমকে জীবিত উদ্ধারে সমর্থ হয়।”
শুধুমাত্র মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাকে অপহরণ করা হয়েছিল উল্লেখ করে মশিউর বলেন, “প্রথমে তাদের ডিমান্ড ছিল দুই কোটি টাকা। পরে সেটা ৩০ লাখ টাকায় নামছে। মাঝখানে তারা কিছু অপপ্রচারও চালিয়েছে। তবে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল টাকা পাওয়া।”
মশিউর বলেন, “এর আগে তারা একজন অধ্যাপকের ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পথে চেকপোস্টে ধরা পড়ার পর মালেক জেল খাটছে সাড়ে তিন বছর। যে কৌশলে তারা কাজটা করেছে এটা মোটেও অ্যামেচার কাজ না।”