প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের মৃত্যু

বাসসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক ইহসানুল করিম ২০১৫ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2024, 02:55 PM
Updated : 10 March 2024, 02:55 PM

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, প্রবীণ সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইহসানুল করিম হেলাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন, তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত ইহসানুল করিম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। রোববার রাত ৮টা ১০ মিনিটে সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।

জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক ইহসানুল করিম ২০১৫ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার আগে ছিলেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোক বার্তায় বলেছেন, প্রেস সচিব হিসেবে ইহসানুল করিম অত্যন্ত সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

“তার মৃত্যুতে দেশের গণমাধ্যম হারালো একজন প্রিয় সহকর্মীকে আর আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত কর্মকর্তাকে।"

প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “ইহসানুল করিমের মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং দক্ষ কর্মকর্তাকে হারাল। দেশে সাংবাদিকতায় ইহসানুল করিমের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হৃদরোগসহ নানা সমস্যা নিয়ে প্রায় মাসখানেক ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ইহসানুল করিম। দিন দশেক আগে তাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়, সেখানে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।

”সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার অবস্থা খারাপ হয়। আমরা চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ৮টার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। উনার হার্টের সমস্যা ছিল। পাশপাশি শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস ছিল।”

ইহসানুল করিমের জন্ম কুষ্টিয়া জেলায়, ১৯৫১ সালের ৫ জানুয়ারি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেন। পরে ভারতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর করেন।

তারুণ্যে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ইহসানুল করিম ১৯৬৭ সালে কুষ্টিয়া সদর মহুকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে ছাত্রদের সংগঠিত করেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন ইহসানুল করিম। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ)-এর সদস্য হিসেবে পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে ১৯৭২ সালে ইহসানুল করিমের কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে পাঁচ বছর তিনি নয়া দিল্লিতে বাসসের ব্যুরো প্রধান ছিলেন।

বিবিসি, পিটিআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেছেন ইহসানুল করিম, সহকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘হেলাল ভাই’ হিসেবে।

২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান ইহসানুল করিম। ওই বছরই তাকে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১৫ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ইহসানুল করিমকে। এরপর কয়েক দফা তার মেয়াদ বাড়ানো হয়।

ইহসানুল করিম তার স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলেকে রেখে গেছেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ইহসানুল করিমের জানাজা হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে দেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় সম্মান। জোহরের নামাজের পর বনানী কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হবে ইহসানুল করিমকে।