বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কিছু বলতে চান না জাপানের বর্তমান রাষ্ট্রদূত

দেশটির পূর্ববর্তী রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও তৈরি করে আলোচনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2023, 02:04 PM
Updated : 3 May 2023, 02:04 PM

বাংলাদেশে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ‘আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি’ নিয়ে মন্তব্য করে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় পড়েছিলেন জাপানের আগের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি; তার উত্তরসূরি হয়ে আসা ইওয়ামা কিমিনোরি নির্বাচন নিয়ে মন্তব্যই করতে চাইলেন না।

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ইওয়ামা বলেন, “আমার পূর্বসূরি কী বলেছেন, আমি জানি না। এই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা থেকে আমি বিরত থাকছি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর নিয়ে বুধবার ঢাকায় জাপান দূতাবাসে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দেশটির নতুন রাষ্ট্রদূত।

সংবাদ সম্মেলনে তার কাছে ইতো নাওকির বক্তব্য তুলে ধরে বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে জাপানের কী অবস্থান, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ইওয়ামার কাছে।

গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নির্বাচন নিয়ে ইতো নাওকির মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।

ওই অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমি শুনেছি পুলিশ কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালট বক্স ভর্তি করেছেন। অন্য কোনো দেশে এমন দৃ্ষ্টান্তের কথা শুনিনি। এভাবে ব্যালট বক্স ভর্তির ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে। এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া দরকার, এটাই আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করি।”

Also Read: জাপানি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে ‘হতবাক’ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ

ওই বক্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যে রাষ্ট্রদূত ইতোকে তলব করে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার কথা সে সময় জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

ডিসেম্বরে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় আসা ইওয়ামা আরও বলেন, “দুদেশের সম্পর্কে কৌশলগত অংশীদারত্বের বিষয়ে … যদি সরকার পরিবর্তন হয়, সে ব্যাপারে, এক্ষেত্রে ধারণাগত ব্যাপার রয়েছে। তবে, আমি এই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে চাই।”

শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে টোকিও যাওয়া রাষ্ট্রদূত কর্মস্থলে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

চীনের সঙ্গে সম্পর্কে জটিলতা দেখছেন না রাষ্ট্রদূত

চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ তার দীর্ঘদিনের উন্নয়ন অংশীদার জাপানের সঙ্গে সম্পর্কও নতুন মাত্রায় নিচ্ছে।

বিশ্ব রাজনীতিতে চীন-জাপানের বৈরিতা থাকলেও এক্ষেত্রে কোনো জটিলতা দেখছেন না বাংলাদেশে বেইজিংয়ের প্রতিনিধি ইওয়ামা।

তিনি বলেন, একইসঙ্গে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ও জাপানের ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) উদ্যোগে থাকার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা তিনি দেখছেন না।

“বাংলাদেশ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সঙ্গে কাজ করছে এবং জাপানের ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) কৌশলের সঙ্গে একমত হয়েছে; আমি মনে করি না যে, এর মধ্যে সাংঘর্ষিক কিছু আছে।”

শেখ হাসিনার সফরের মধ্যদিয়ে দুদেশের সম্পর্ক কৌশলগত অংশদারত্বে রূপান্তর হওয়ার কথা তুলে ধরে জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট ও অভিষ্ঠ লক্ষ্যকেন্দ্রিক’ সম্পর্কের দিকে নজর দিচ্ছে দুদেশ।

“কৌশলগত অংশীদারত্ব কেবল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে অর্থনীতি, উন্নয়ন ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের মতো বিষয় রয়েছে।”

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে কৌশলপত্র ঘোষণা করে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশ ও জোট।

দীর্ঘদিন সময় নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেই বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক ‘রূপরেখা’ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

Also Read: ইন্দো-প্যাসিফিক ‘রূপরেখা’ জানাল বাংলাদেশ, যা আছে এতে

Also Read: বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক 'কৌশলগত অংশীদারত্বে' উন্নীত: প্রধানমন্ত্রী

এই রূপরেখাকে জাপান স্বাগত জানিয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা বলেন, “এতে অনেক বিষয়ে মিল রয়েছে, আবার ভিন্নতাও রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করতে পারব। রূপরেখাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশে ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “মাত্রই আমরা লিখিত রূপটা পেলাম। বাংলাদেশ সরকারের এই রূপরেখাকে এখনই মূল্যায়ন করলে সেটা হবে, আগ বাড়িয়ে বলা।”

প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফরে জাপানের সঙ্গে ‘প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর’ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ কী ধরনের সমর সরঞ্জাম কিনতে যাচ্ছে- এ প্রশ্নে জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, “এই মুহূর্তে সরঞ্জাম, হার্ডওয়্যার প্রভৃতি নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়নি। তবে, আলোচনা চলমান।”

অন্য দেশকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য জাপান সরকার অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিসটেন্সের (ওএসএ) নামে নতুন স্কিম হাতে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার অনুরোধ করলে এই সহায়তা দিতে প্রস্তুত তার দেশ।